ব্রিটেন থেকে যে কারণে কমেছে রেমিটেন্স
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৫৪:০০,অপরাহ্ন ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ৫৮৫ বার পঠিত
তানভীর আহমেদ, লন্ডন
সোনালী ব্যাংক, ইউকে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে বিগত বছরের চেয়ে রেমিটেন্স প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে। ব্রিটেন থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে রেমিটেন্সের এই ধীরগতি শুরু হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে।
সোনালী ব্যাংকের সহকারী প্রধান নির্বাহী আমীরুল চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংক ইউকে থেকে রেমিটেন্স পাঠানো হয়েছে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১৫ সালে যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারে এবং ২০১৬ সালে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে মোট রেমিটেন্স পাঠানো হয়েছে ১৪.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। যদিও ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে বিগত বছরের তুলনায় রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। তবে সেটি কোনোভাবেই ৪০ মিলিয়নের ধারে কাছেও নেই।’
রেমিটেন্স প্রবাহে এত বড় ধরনের ধসের কারণ জানতে চাইলে, সোনালী ব্যাংক ইউকের প্রধান নির্বাহী এম. সারোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্রিটেনের ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসেস এফ এস এ ২০১৪ সাল থেকে বেশ কিছু কঠিন শর্তারোপ করার পর থেকে গ্রাহকদের মধ্যে সোনালী ব্যংকের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। প্রবাসীরা এমন মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন যেখানে বেশি নিয়ম কানুন মানতে হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেই সঙ্গে বিগত এক বছরে ইংল্যান্ডের চারটি শহরে সোনালী ব্যাংকের শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে রেমিটেন্স সংগ্রহে ভাটা পড়েছে ।’
ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ দেশে তাদের পরিবারের সদস্যদের রেমিটেন্স প্রেরণ করতেন। বিগত কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে বলে জানালেন সোনালী ব্যংকের সহকারী প্রধান নির্বাহী।
লন্ডনে অনুমোদনহীন বিকাশ এজেন্ট
পূর্ব লন্ডনের একাধিক মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও একই তথ্য পাওয়া গেছে। পিবিএল মানি ট্রান্সফার লিমিটেডের হেড অব অপারেশন্স শের আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল অথরিটির নজরদারি ও অত্যাধিক নিয়মনীতি আরোপের কারণে ছোট ছোট মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারছে না। সাম্প্রতিক সময়ে পূবালী ব্যাংক, এনসিসি ব্যংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের রেমিটেন্স প্রতিষ্ঠানগুলো লন্ডনে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যে সব রেমিটেন্স প্রতিষ্ঠান টিকে আছে, তার ৯৯ শতাংশই স্মল পেমেন্ট ইন্সটিটিউশন হিসেবে পরিচালিত। বছরে যাদের লেনদেন দেড় মিলিয়নের বেশি নয়। এধরনের মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্য একটি ব্রিটিশ ব্যাংকের সঙ্গে বিজনেস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরণ করতে হয়। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ এনে যুক্তরাজ্যের বার্কলেস ব্যাংক এধরনের স্মল পেমেন্ট ইন্সটিটিউশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর, ব্যবসায়িক ঝুঁকির মুখে পড়ে রেমিটেন্স হাউসগুলো।’
শের আহমেদ বলেন,‘পরবর্তীতে সোনালী ব্যাংক ইউকে এধরনের ছোট রেমিটেন্স হাউসগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের দায়িত্ব নিলেও এখন আর তারা মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব নিচ্ছে না। এতে করে ব্যবসায়িক ঝুঁকির মুখে পড়েছে রেমিটেন্স হাউসগুলো। এতসব নিয়ম -কানুনের কারণে বৈধ পথে রেমিটেন্সের হার কমতে থাকে।’
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন রেমিটেন্স ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সঙ্গে দর কষাকষি করে স্মল পেমেন্ট ইন্সটিটিউশনগুলোর জন্য বিজনেস অ্যাকাউন্ট খুলতে সহায়তা করলে রেমিটেন্স হাউসগুলো টিকে থাকতে পারবে বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে ‘বিকাশ’ এর মাধ্যমে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর যে অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা পাওয়া গেছে। পূর্ব লন্ডনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পানের দোকান থেকে শুরু করে মুদি দোকান কিংবা কলিং কার্ড বিক্রির স্টলেও চলছে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের ব্যবসা। অথচ এদের কারও বিকাশের মাধ্যমে ব্রিটেন থেকে অর্থ প্রেরণের অনুমোদন নেই।
বাংলাদেশ হাই কমিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর শরিফা খান বলেছেন, ‘বিকাশের মাধ্যমে যদি কেউ অনুমোদনহীন এধরনের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে, তাহলে সেটি হুন্ডি বলে বিবেচিত হবে। তাদের ব্রিটেনের নিয়ম মেনে, ফাইন্যান্সিয়াল অথরিটির অনুমতি নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করা উচিত।’ এ ধরনের অনুমোদনহীন ‘বিকাশ’ এজেন্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে শরিফা খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ব্রিটেনের অনুমোদনহীন ‘বিকাশ’ এজেন্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার হাইকমিশনের নেই। শুধুমাত্র ব্রিটেনের ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি এফএসএ বা মানি লন্ডারিং রেগুলেশন এমএলআর-ই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।