দুবাইয়ে সততার অনন্য নজির রেখে কোটি প্রবাসীর মুখ উজ্জ্বল করলেন বাংলাদেশী দরীদ্র শ্রমিক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৫৪:৪৯,অপরাহ্ন ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ২৯৪ বার পঠিত
দুবাইয়ে সততার অনন্য নজির রেখে কোটি প্রবাসীর মুখ উজ্জ্বল করলেন বাংলাদেশী দরীদ্র শ্রমিক
দেশের মাটি থেকে হাজার মাইল দূরে আপনজনদের ছেড়ে থাকা কোটি প্রবাসীদের জীবনে গদবাধা কাজ আর বাড়ির চিন্তার বাইরে সুযোগ নেই তেমন কোন ভাবনার। অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে অবশিস্ট থাকেনা বাড়তি বিনোদনটুকু নিয়ে কিছুটা উজ্জীবিত হবার পর্যন্ত।
তার উপরে বিদেশ-বিভুইয়ে বাংলাদেশীদের প্রতি বিভিন্ন দেশের মানুষের রয়েছে যথেষ্ট বৈরিভাব। এমন বৈচিত্রহীন নিরামিস জীবনেও খুব একটা ধরা দেয়না প্রাপ্তি।
তবে মাঝে মাঝে দু-একজন বাংলাদেশীর অনন্য ‘কৃতিত্বের গল্প ‘ সেই বিদেশ-বিভুইয়ে বিরামহীন ক্লান্তিতেও এনে দেয় দারুন উচ্ছলতা। একজনের জন্যই গর্বে ভরে উঠে লাখো কোটি বাংলাদেশী প্রবাসীর।
এমন ঘটনা কিছু নতুন নয়! বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের এমন ব্যতিক্রমি উদাহারন সৃষ্টি করার বেশ কিছু ঘটনাই আমরা জানি। এ দফায় ব্যতিক্রমি সততার জন্য প্রশংসিত হলেন ৪২ বছর বয়সী জহীর মিয়া নামের এক বাংলাদেশি দরীদ্র শ্রমিক । ৪২ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি আরব আমিরাতের দুবাইয়ে থাকেন।
জহির মিয়ার সততার কথা ইতমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বগনমাধ্যমে।
তার সততা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে আরব আমিরাতের গণমাধ্যম। দেশটির জাতীয় দৈনিক খালিজ টাইমস এক প্রতিবেদনে জহিরের সততা ও ন্যায়পরাণতা তুলে ধরেছে। জহির মিয়া খালিজ টাইমসকে বলেন, আমি বুধবার বিকেলে কাজ করছিলাম; এ সময় আবু ধাবি চেম্বার অব কমার্সের পাশে একটি বেঞ্চের ওপর কালো মানিব্যাগ পড়ে থাকতে দেখি। আমি জানতাম মানিব্যাগটির মালিক খুঁজতে আসবেন। আর এ জন্যই আমি ওই জায়গায় অপেক্ষা করছিলাম।
প্রায় এক ঘণ্টা পরে আন্দ্রেস ক্রসে নামের এক জার্মান নাগরিক হন্ত দন্ত হয়ে সেখানে এলে মানিব্যাগ হাতে এগিয়ে যান বাংলাদেশি জহির। জার্মান ঐ নাগরিক যেন প্রাণ ফিরে পান তখন । মানিব্যাগটিতে নগদ অর্থ ও ক্রেডিট কার্ড সহ যাবতীয় কাগজপত্র ঠিক আছে কী না বিনয়ের সাথেই দেখে নিতে বলেন জহির।
এ ঘটনায় জহিরের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জার্মানির নাগরিক ক্রসে।
গনমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘মানিব্যাগটি হারিয়ে গেলে কি ধরনের ঝামেলায় পড়তাম তা আমি কল্পনাও করতে পারি না। মানিব্যাগের ভেতরে আমিরাতের ড্রাইভিং লাইসেন্স, ক্রেডিট, ডেবিট কার্ড, স্বাস্থ্য বীমা ও জার্মানির বিভিন্ন নথি ছিল, এছাড়াও ছিলো বেশ মোটা অংকের টাকা ।জহিরের সতায় মুগ্ধ হয়ে ক্রসে তাকে আর্থিক পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিনয়ের সাথে সে পুরস্কার ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে জহির ’
সংবাদ মাধ্যমের সুত্রেই জানা গেছে, বাংলাদেশের জহির মিয়ার ঘরে স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। ১৫ বছর ধরে আরব আমিরাতে কাজ করছেন তিনি।
সেদিনের ঘটনা বর্ননায় ঐ জার্মান নাগরিক ক্রসে বলেন, ওই পার্কের বেঞ্চে তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন। কাজে ফেরার পর তিনি বুঝতে পারেন মানিব্যাগটি হারিয়ে গেছে। জার্মানির এই নাগরিক বাংলাদেশি জহিরের সততার প্রশংসা করে বলেন, ‘তিনি একজন প্রকৃত নায়ক। তার সততায় আমি মুগ্ধ।’