সহসা নিষ্পত্তি হচ্ছে না সালাহউদ্দিনের মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২১:০৪,অপরাহ্ন ১০ আগস্ট ২০১৫ | সংবাদটি ৩৬৩ বার পঠিত
শিলংয়ে আইনি প্রয়োজনে বসবাসরত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট-৪৬’ মামলা শেষ হতে এক বছর লাগতে পারে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অনুপ্রবেশের প্রায় আড়াই মাস পর মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অতি দ্রুত মামলার কার্যক্রম শুরু হলেও শিগগিরই তার মামলার রায় হচ্ছে না- এমনটাই জানিয়েছেন শিলংয়ের দুই সিনিয়র আইনজীবী। তবে এখনই দেশে ফিরতে উদগ্রীব এ বিএনপি নেতা। মুঠোফোনে শিলং থেকে তার এক আত্মীয় মানবজমিন অনলাইনকে জানান, সালাহউদ্দিন ভাই মনে করেন বাংলাদেশের মানুষ আমার আত্মার আত্মীয়। তিনি খুব বেশি মিস করেন তার নির্বাচনী এলাকার জনগণকে। তাদের দেখলে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেন না। শিলংয়ের বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত ৩রা মে সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট-৪৬’ এ দায়ের করা মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। চার্জশিটে ১১ জনকে মামলার সাক্ষী দেখানো হয়েছে। এসব সাক্ষীর মধ্যে আছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের উপ-পরিদর্শক পি লামারেসহ পাঁচজন পুলিশ ও সালাহউদ্দিনকে পর্যবেক্ষণকারী প্রথম দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক একে রায়সহ ছয়জন চিকিৎসক। ২২শে জুলাই অভিযোগ গঠনের শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এরপরই গত ৩০শে জুলাই থেকে অনুপ্রবেশ মামলার শুনানি শিলংয়ের আদালতে শুরু হয়েছে। শুনানিতে এদিন দুই জন সাক্ষীর দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এদিন শুধু পুলিশ কনস্টেবল এন সাংমা উপস্থিত থেকে সাক্ষ্য দেন। তিনি ১১ই মে সালাহউদ্দিনকে গলফ লিংক এলাকা থেকে পুলিশ ফাঁড়িতে এনেছিলেন। সাক্ষ্য দেয়ার সময় পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ কনস্টেবল এন সাংমা শুনানিতে বলেন, ১১ই মে ভোরে টহল দেয়ার সময় শিলং গলফ লিংক এলাকা থেকে ফোন পেয়ে সাব ইন্সপেক্টর কে সাবাং তাকে ও অন্য এক পুলিশ কনস্টেবলকে নিয়ে সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই স্থানীয় তিন-চারজন লোকের সঙ্গে একজন দাড়িওয়ালা লোক দাঁড়িয়ে আছেন। পরিচয় জানতে চাইলে ওই লোক তার নাম সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানান। সেখান থেকে তাকে প্রথমে পুলিশ ফাঁড়িতে, এরপর শিলং সদর পুলিশ থানা, মীমহ্যানস মানসিক হাসপাতাল ও শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সরকার পক্ষে পিপি আই সি ঝা উপস্থিত ছিলেন। প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়ার পর শিলংয়ের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মুখ্য বিচারক কে এম লিংদো নংব্রি আগামী ১৯ শে আগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফরেনার্স অ্যাক্টে দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র গঠন, সাক্ষীদের যুক্তি, পাল্টা যুক্তি নিয়ে শুনানির প্রক্রিয়াতেই বেশি সময় লেগে যাবে। শিলংয়ে অনুপ্রবেশের মামলা পরিচালনাকারী কয়েকজন আইনজীবী জানালেন, এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে কিছুটা সময় লাগে। ভারতের ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৪৬-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, বিনা পাসপোর্টে অনুপ্রবেশের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন কয়েক দিন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ- হয়ে থাকে। বেশির ভাগ মামলায় লঘু শাস্তি হয়েছে। শাস্তি ভোগের পর যথারীতি তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে সালাহউদ্দিন আহমেদ ব্যতিক্রম। কারণ শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন। এ কারণে তার পরিণতি অন্যদের মতো না-ও হতে পারে। এদিকে মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে পৌঁছানোর পর পুলিশ ফাঁড়ি, দুই দফায় সিভিল হাসপাতাল, মানসিক হাসপাতাল মীমহ্যানস, নেগ্রিমস হয়ে শহরের বিষ্ণুপুরের একটি রেস্ট হাউসে থাকছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। শিলং না ছাড়ার শর্তে গত ৫ই জুন তিনি আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ওই রেস্ট হাউসেই থাকছেন। বিচারকাজ থাকলে তিনি আদালতে যান। তা না হলে রেস্ট হাউসেই সময় কাটান। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী খাওয়া-দাওয়া করছেন। বাসাতেই খাবার রান্না হচ্ছে। তবে রাজনীতিবিদের চিরাচরিত অভ্যেস সালাহউদ্দিনকে পেয়ে বসেছে। বিভিন্ন সময়ে স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও দলের সহকর্মীরা দেশ থেকে গিয়ে সাক্ষাৎ করে ফিরছেন। এর আগে প্রায় দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর গত ১১ই মে ভারতের শিলংয়ে উদ্ধার হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। পরে পুলিশ তাকে আটক করে মানসিক হাসপাতাল মীমহ্যানসে নিয়ে যায়। একদিন পর মীমহ্যানস থেকে আবার তাকে পাঠানো হয় সিভিল হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের আন্ডার প্রিজনার সেলে (ইউটিপি) তাকে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। সিভিল হাসপাতালে বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় তাকে বিশেষায়িত হাসপাতাল নেগ্রিমসে এক সপ্তাহ ধরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। এরপর ৫ই জুন শিলংয়ের আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান সালাহউদ্দিন আহমেদ। এরপর থেকে কটেজেই থাকছেন এ বিএনপি নেতা।