‘তখন তাদের চেতনার দুয়ার বন্ধ ছিল’
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৩:০৩,অপরাহ্ন ১৩ আগস্ট ২০১৫ | সংবাদটি ৩৬২ বার পঠিত
স্টাফ রিপোর্টার,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি। অনেকে আজকে আলোচনা করতে গিয়ে গণতন্ত্র নাকি দেখেনই না। কেউ সংবিধান সংশোধনের জন্য আবার কমিশন গঠনের কথা বলেন। কেউ কেউ নানাভাবে নানা কথা বলেন। যারা এক সময় সেনাশাসকদের সঙ্গে ছিলেন, এখন গণতন্ত্রের বিকাশের কথা বলছেন, তখন তাদের চেতনার দুয়ার বন্ধ ছিল।
গতকাল রাজধানীর সার্কিট হাউস সড়কে ‘তথ্য ভবনের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান সংশোধনে একটি কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক।
ওই পরামর্শের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এই কথাগুলো বলেন, তাদের চেহারাগুলো যখন আমি দেখি… এরাই একসময় ওই মিলিটারি ডিকটেটররা, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, কেউ তাদের উপদেষ্টা হয়েছে, কেউ তাদের সঙ্গে চাকরি করেছে, কেউ তাদের পদলেহন করেছেন, কেউ তাদের একটু করুণা ভিক্ষার জন্য ধরনা দিয়ে পড়ে থেকেছেন। তখন কিন্তু তাদের এই চেতনাগুলো ছিল না। মনে হচ্ছে, চেতনার দুয়ারটা যেন তখন বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, আমরা যখন এসে উন্মুক্ত করে দিয়েছি, মুক্তবুদ্ধি চর্চার সুযোগ করে দিয়েছি, তখন যেন ওনাদের বুদ্ধির দুয়ার এত খুলে যাচ্ছে… যতই ওনারা গণতন্ত্র পাচ্ছেন, আরও চাই আরও চাই, করতে থাকেন। এই আরও চাইয়ের যে ক্ষতিকারক দিকটা সেটা তারা চিন্তা করছেন না। এটা করতে যেয়েই কিন্তু মাঝখানে আরেকটা ধাক্কা এসেছিল।
তিনি বলেন, যখন যতটুকু সুযোগ পাচ্ছে, এদের চাহিদার মাত্রা আরও ততটুকু বেড়ে যাচ্ছে। ভালো। চাহিদা থাকা ভালো। তাতে আমরা আপত্তি করব না। গণতন্ত্র আরও সুসংহত হোক। আরও বিকশিত হোক। কিন্তু আমরা রাষ্ট্র চালাচ্ছি। সকলেরই কথা বলার অধিকার আছে। কথা কিন্তু সকলে বলে যাচ্ছে। যার যা মনে আসছে, মুখে আসছে, বলে যাচ্ছে। আমি আশা করি, যারা বলেন, তারা অন্তত বলার সময় এই কথাটুকু একটু মনে রাখবেন। ’৯৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত কী অবস্থা ছিল? আর ২০০১ থেকে ২০০৮ বা ২০০৯ পর্যন্ত কী অবস্থা ছিল?
৩২টি বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, ২৪টি এফএম বেতার কেন্দ্র এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও পরিচালনার অনুমোদন দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে একটা মাত্র চ্যানেল ছিল, তাও সরকারি। বেসরকারি খাতে টেলিভিশন… এটাতো আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। কোন সরকার তো অতীতে এই সাহসই পায়নি। আমরাই দিলাম বেসরকারি টেলিভিশন। আর সেখানে বসে আমাদের সমালোচনাটাই যেন সব থেকে বেশি। সুযোগটা যে আমরা করে দিয়েছি, যারা বলেন- তারা মনে হয় মনে রাখেন না। আমরা চেয়েছি, সমালোচনা হোক। সেই সমালোচনা গঠনমূলক হবে। সেই সমালোচনা যেন কেউ বিকৃত না করে। মানুষকে বিভ্রান্ত না করে। যতটুকু ভালো কাজ করেছি, সমালোচনার সঙ্গে সঙ্গে সেটুকুও বলার যেন সাহস থাকে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখার বিষয়ে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলে যার যার ধর্ম নিয়ে চলবে। সকলের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে। কেউ কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কোন কাজ করবে না। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ভোগ করবে। সেইভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র বারবার কষাঘাতের শিকার হয়েছে। অবৈধ দখলদাররা গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। তিনি বলেন, দেশ কেবলমাত্র স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির নেতৃত্বে উন্নত হতে পারে। কিন্তু ২১ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তারা দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধ্বংস করেছে। একটি শিশু বিকৃত ইতিহাস থেকে কিছুই শিখতে পারে না। কিন্তু এ দেশে এটাই হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জঙ্গিবাদ দমন এবং সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের দুষ্টচক্র নির্মূল করার লক্ষ্যে কাজ করছি। কিন্তু জনসচেতনতা ছাড়া এ প্রয়াস সফল হবে না- একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় উগ্রবাদীদের চারণ ক্ষেত্র নয়। এদেশে সব ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিবেশে বসবাস করবে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদের সভাপতিত্বে ডিএফপি’র মহাপরিচালক লিয়াকত আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ১৬ তলা এই ভবনে থাকবে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি), গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ও ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের প্রধান কার্যালয়। এছাড়া, এ ভবনে আধুনিক গ্রন্থাগার, গবেষণা কেন্দ্র, চলচ্চিত্র প্রদর্শন হল (ফিল্ম প্রোজেকশন হল), অডিটোরিয়াম ও ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্রও থাকবে। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৮ দশমিক ৬৪ কাঠার উপর তথ্য ভবনের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হবে এবং এটি জাতির কল্যাণ, বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিকাশের পাশাপাশি তথ্য সরবরাহ ও বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি), জাতীয় মাশ কম্যুনিকেশন ইনস্টিটিউশন (নিমকো) এবং পিআইবি’র ডিজিটালাইজেশনের কর্মসূচি গ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সেক্টরের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আধুনিক চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকার সাংবাদিক হয়রানির আইন বাতিল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, গত চার বছরে ৬০৮ জন সাংবাদিককে ৩ দশমিক ৮০ কোটি টাকার বেশি আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য স্থায়ী সহায়তা ব্যবস্থার জন্য একটি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।