অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের টাকার বদলে দেয়া হচ্ছে চিনি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:২৩:৪১,অপরাহ্ন ১৯ আগস্ট ২০১৫ | সংবাদটি ৪১২ বার পঠিত
স্টাফ রিপোর্টার,
দেশের বৃহত্তম জয়পুরহাট চিনিকলে এখন বিপুল পরিমান চিনি অবিক্রিত রয়েছে। ফলে আগামী নভেম্বর মাসে শুরু হতে যাওয়া মাড়াই মৌসুমে চিনি রাখার জায়গা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। গত রমযান মাসে প্যাকেটে করে চিনি বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সফল হয়নি।
চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৭ আগষ্ট) পর্যন্ত জয়পুরহাট চিনিকলে অবিক্রিত চিনির পরিমান হচ্ছে ৮ হাজার ৯ শ ৫৯ দশমিক ১৫ মেট্রিক টন । যার মূল্য ৩৩ কোটি ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫০ টাকা। চিনি বিক্রি না হওয়ার কারনে সরকারের কাছ থেকে নেয়া ঋণের পরিমান যেমন বেড়ে যাচ্ছে তেমনি শ্রমিক-কর্মচারীদের ভবিষৎ তহবিল (পিএফ) থেকে ঋণ নিয়ে আভ্যন্তরীন খরচ মেটানো হচ্ছে।শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বাকি রয়েছে জুলাই ও আগষ্ট মাসের। অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের টাকার বদলে দেয়া হচ্ছে চিনি।
চিনিকল সূত্র জানায়, বাজারে থাকা বে-সরকারীভাবে আমদানীকৃত চিনির উপর ভ্যাট না থাকায় দাম তুলনামূলক কম। ফলে গুনে মানে উন্নত এবং ডেকট্রোজ ও কোলেস্টোলের মুক্ত হওয়ার পরেও দেশীয় চিনি বিক্রি হচ্ছে না। বিগত চারটি মাড়াই মৌসুমের উৎপাদিত বিপুল পরিমান চিনি অবিক্রিত থাকায় সরকার ৫৫ টাকা কেজি থেকে চতুর্থ দফা কমিয়ে ৩৭ টাকা কেজি নির্ধারন করলেও কোন ফল হয়নি। ২০১১-১২ মাড়াই মৌসুমে উৎপাদিত ১,০২৮ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন, ২০১২-১৩ মৌসুমে ১১৭ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ মৌসুমে ২,০৬১ মেট্রিক টন ও ২০১৪-১৫ মাড়াই মৌসুমে ৫,৭৫২ দশমিক ১৫ মেট্রিক টন চিনি এখনো অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
চিনিকলের অপর এক সূত্র জানায়, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ মৌসুমের উৎপাদিত চিনির রং পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এই চিনি গুলো আবহাওয়া গত কারনে গলে যাওয়ার ও গুনগত মান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এ বিপুল পরিমান চিনি অবিক্রিত থাকায় বিপাকে পড়েছে চিকিকল কর্তৃপক্ষ। রমযান মাসে তুলনামূলক চিনির চাহিদা বেশী থাকে আবার দামও বৃদ্ধি পায়। সে কারনে বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার খোলা বাজারে চিনি বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সে মোতাবেক প্যাকেট জাত করে চিনি বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সফল হয়নি। মাত্র ৫০ মে.টন প্যাকেট জাত চিনি বিক্রি হয়েছে ।
জয়পুরহাট চিনিকলের হিসাব বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে অবসরপ্রাপ্ত ৯৩ জন শ্রমিক-কর্মচারী ও ২০১৫ সালের আগষ্ট পর্যন্ত ৩৮ জন অবসর নেয়া শ্রসিক-কর্মচারীদের টাকার বদলে চিনি দেয়া হয়েছে। এসব চিনি ৩৭ টাকায় কিনে ৩৩/৩৪ টাকা কেজিতে বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। ফলে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়েছে বলে সদ্য অবসরে যাওয়া কেন্দ্র ইনচার্জ লুৎফর রহমান, ইক্ষু উন্নয়ন সহকারী সামছুল আলম ও জুনিয়র করনিক আনিসুর রহমান জানান।
জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, অবিক্রিত থাকা এ সব চিনি বিক্রি করা না গেলে আগামী নভেম্বর মাসে শুরু হতে যাওয়া মাড়াই মৌসুমে চিনি রাখার জায়গা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। গত মাড়াই মৌসুমেও সাধারন মিলনায়তন, স্কুল ঘর, অফিসার্স ক্লাবে চিনি রাখা হয়েছিল বলে জানান তিনি।