‘মা আমি চলে গেলাম’
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৫:০৯,অপরাহ্ন ২০ আগস্ট ২০১৫ | সংবাদটি ২৬৩ বার পঠিত
স্টাফ রিপোর্টার,
মেধাবী স্কুলছাত্রী আমিনা আত্মহনন করেছে। আত্মহননের সময় তার বুকে গুঁজে রেখেছিল পাঁচ পাতার চিঠি। চিঠিতে লেখা ছিল, ‘মা আমি চলে গেলাম তোমাদের ছেড়ে। মানুষ হতে চেয়েছিলাম কিন্তু বখাটেদের কারণে আমার আশা পূর্ণ হলো না। অবশেষে চলে গেলাম।’ অপরদিকে তারই মতো আরও ১০ ছাত্রী বখাটেদের উৎপাতে স্কুলে যেতে পারছে না- এমন অভিযোগও পড়েছে পুলিশ প্রশাসনে। তবে আমিনা আত্মহননের ঘটনায় অভিযুক্ত বখাটে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গাইবান্ধা সদর থানার ওসি রাজিউর রহমান জানান, গাইবান্ধা সদর উপজেলার দুলালের ভিটা গ্রামের আবদুর রউফ মিয়ার মেয়ে আমিনা বেগম গাইবান্ধা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। দেখতেও সুন্দরী। আর এ কারণেই রায়হান নামের এক বখাটে তার পিছু নেয়। রায়হানের বাড়ি শহরের জুম্মাপাড়ার কুঠিপাড়ায়। আমিনা যখন স্কুলে যাতায়াত করতো তখন রায়হান তাকে কু-প্রস্তাব দিতো। প্রতিদিনই স্কুলে যাওয়া-আসার সময় প্রেমের প্রস্তাব দিতো আমিনাকে। আমিনা ভয় লজ্জা সংকোচে তার বাবা-মায়ের কাছে এসব ঘটনা খুলে বলেনি। গত ৭ই আগস্ট বিকালে আমিনা কোচিং করে বাড়ি যাচ্ছিলো। মর্ডান স্কুলের সামনে ওত পেতে থাকা বখাটে সন্ত্রাসী রায়হান তার সহযোগীদের নিয়ে আমিনাকে জোরপূর্বক একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে যায় গড়েরবাতা নামক নির্জন স্থানে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর শেষ বিকালে আমিনার পরিবারের সদস্যরা রায়হান ও আমিনাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে রাতে রায়হানের পরিবারের লোকজন স্থানীয় ও শহরের প্রভাবশালী মাতব্বরদের সহযোগিতায় রায়হানকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমিনাদের বাড়িতে এসে সালিশ বৈঠকে বসে। আমিনার মা শিল্পী বেগম বলেন, বৈঠকে রায়হানের পক্ষে আসা মাতব্বররা স্কুলছাত্রী আমিনার সঙ্গে রায়হানের বিয়ে দেয়ার জন্য আমার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ দেয়। তিনি আরও বলেন, মাতব্বররা গত ১৬ই আগস্ট সন্ধ্যার পর রায়হানের সঙ্গে আমার মেয়ে আমিনার বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জোরপূর্বক বিয়ের দিন-তারিখ ঠিকঠাক করে ওই দিন রাতে রায়হানকে নিয়ে যায় মাতব্বররা।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া এবং গ্রাম্য সালিশকারীদের চাপিয়ে দেয়া অন্যায় বিয়ে মেনে নেতে পারেনি আমিনা। কারণ সে পড়ালেখা করে বড় হতে চায়। তার ওপর চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের কারণে ও রাগে-ক্ষোভে, অপমানে বিয়ের আগে ১৫ই আগস্ট রাতে সে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। পত্রে সে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে ৫ পৃষ্ঠাব্যাপী একটি বর্ণনা লিখে যায় বলে আমিনার মা শিল্পী বেগম জানান। রায়হান নামের এক বখাটের সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ের ব্যবস্থা করায় এবং স্থানীয় মাতব্বরদের দ্বারা অপমানিত হওয়ার কথা লিখে এবং লিখে ‘মা, আব্বা আমি চলে গেলাম তোমাদের ছেড়ে। বখাটের কারণে আমি মানুষ হতে পারলাম না।’ এ ঘটনা শুনে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ, পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার ফকরুজ্জামান জুয়েল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল মমিন খান আমিনার বাড়ি পরিদর্শনে যান।
সেখানে তারা আমিনা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।
আমিনার মা শিল্পী বেগম ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, আমিনা শহরে স্কুলে যাওয়ার সময় প্রায়ই কুঠিপাড়ার রায়হান নামের এক যুবক তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করতো।
এ ঘটনা নিয়ে শহরে ও আমিনার ক্লাস ও স্কুলে তোলপাড় শুরু হয়। পরে ওইদিন থানায় বখাটের বিরুদ্ধে সাধারণ অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে শহরে। স্কুল লেন, মোড় এবং মেয়েদের স্কুলের সামনে পাহারা বসায়। গত মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ বখাটে রায়হানকে গ্রেপ্তার এবং আত্মহননে প্ররোচনার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
এদিকে আমিনার স্কুলের ১০ ছাত্রী বখাটেদের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগপত্রটি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে। এরপরই শুরু হয় তোলপাড়।