পোশাক রপ্তানি :পরিমাণ বেড়েছে, আয় কমেছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৪:৩৭,অপরাহ্ন ২০ আগস্ট ২০১৫ | সংবাদটি ৪২১ বার পঠিত
স্টাফ রিপোর্টার,
বিশ্বের প্রধান বাজারগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়লেও কমেছে রপ্তানি আয়। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পোশাক রপ্তানি করে তাদের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ উভয় বাজারে রপ্তানির পরিমাণ বাড়িয়েছে। তবে গত জুলাই মাসে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় আগের বছরের (২০১৪) তুলনায় ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ কমে গেছে। এতে উদ্বিগ্ন পোশাক রপ্তানিকারকরা।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা অজুহাতে ক্রেতারা পোশাকের দাম কমাচ্ছে। প্রতিটি অর্ডারে আগের অর্ডারের তুলনায় দাম কম দেয়া হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে ইউরোর দাম পড়ে যাওয়ায় রপ্তানিতে তার প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশের সাথে প্রতিযোগিতায় থাকা দেশগুলো রপ্তানির সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিনিয়ত তাদের মূদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। আবার বাংলাদেশের টাকা ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে। এ কারণে রপ্তানির পরিমাণ বাড়লেও আয়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা ওই দেশে বিভিন্ন দেশ থেকে যে পরিমাণ বস্ত্র আমদানি করা হয় তার হিসাব রাখে। এরকম একটি সংস্থা ‘ওটেক্সা’। তারা সাধারণত মিটারে এ হিসাবটি রাখে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৮৩ কোটি বর্গমিটার কাপড় আমদানি করেছে। আর চলতি বছরের (২০১৫) একই সময়ে এ আমদানির পরিমাণ প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে ৯৩ কোটি ৩৩ লাখ বর্গমিটার হয়েছে। কিন্তু এই বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয় পড়তির দিকে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আলোচ্য সময়ে পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি কমেছে। চীন, ভারত এবং কোরিয়ার পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়লেও বাংলাদেশের তুলনায় তা নগণ্য।
অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভূক্ত দেশসমুহে বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাক আমদানির হিসাব রাখে ‘ইউরোস্টাট’। তারা সাধারণত কেজিতে বস্ত্র আমদানির হিসাব রাখে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের (২০১৪) জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে ৬৪ কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার কেজি ওজনের পোশাক আমদানি করেছে। চলতি বছরের (২০১৫) একই সময়ে এই আমদানি চার দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ বেড়ে ৬৬ কোটি ৮৯ লাখ কেজি হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ইউরোপের বাজারে সামগ্রিক পোশাক রপ্তানি কমেছে সাড়ে তিন শতাংশ বেশি। এই বাজারে আলোচ্য সময়ে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, চীন প্রভৃতি দেশের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অপরদিকে শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মরক্কো, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশের রপ্তানি ইউরোপের বাজারে বেড়েছে।
দুই বাজারে রপ্তানি বাড়লেও পোশাক খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার পেছনে উদ্যোক্তারা বেশকিছু কারণকে দায়ী করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-ক্রেতারা পোশাকের দাম কমিয়ে দিচ্ছেন। মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি এবিএম সামছুদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, গত একবছরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা পোশাকের দাম ১০ শতাংশ কমিয়েছেন। আর ইউরোপের ক্রেতারা দাম কমিয়েছেন ১২ শতাংশের মতো। এবার তারা আরো নির্দয় হয়েছেন। এক অর্ডারে তারা তিনবার দাম কমিয়েছেন এমন উদাহরণও আছে। এছাড়া তিনি ইউরোপের বাজারে রপ্তানি আয় কমে যাবার জন্য ইউরোর দাম কমে যাওয়াকেও দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, একবছর আগে এক ইউরো সমান ছিল এক ডলার ৩৫ সেন্ট (মার্কিন ডলার)। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এসে তা এক ডলার সাত সেন্টে নেমে যায়। তবে ইউরোপের বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চীন এবং ভারত তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের টাকা আগের থেকে আরো শক্তিশালী হয়েছে। প্রতিযোগীদের সাথে আমরা মুদ্রায় মার খাচ্ছি বলে তিনি জানান।
এদিকে রানা প্লাজা ধসের পর ‘এ্যকর্ড’ এবং ‘এ্যালায়েন্স’ এর নির্দেশনা মতো বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা তাদের কারখানার মান বাড়িয়েছেন। বিভিন্ন খাতে বড় অংকের অর্থ খরচ করা হয়েছে। কথা ছিল কারখানার মান উন্নত করা হলে তারা পোশাকের দাম বাড়াবেন। এবিএম সামছুদ্দিন বলেন, পোশাক কারখানার মান বাড়ানোর পর পোশাকের দাম বাড়েনি বরং কমেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের উচিত ছিল বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বায়িং প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে এ বিষয়ে কথা বলা। কারণ সরকারের সাথে কথা বলে ওই দুই সংগঠন আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। তিনি আরো বলেন, নিরাপত্তার বিষয়ে প্রতিটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের আলাদা ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ আছে। এ বিষয়টি তারা দেখতে পারতো। অহেতুক ‘এ্যকর্ড’ এবং ‘এ্যালায়েন্স’কে এখানে আসতে দেয়া হয়েছে।