শতাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৮:১৩,অপরাহ্ন ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | সংবাদটি ৩৪০ বার পঠিত
স্টাফ রিপোর্টার,
বিরোধী জোটের শতাধিক শীর্ষ রাজনীতিকের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সম্প্রতি পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখা নতুন একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকা দেশের সব কয়টি বিমান ও স্থলবন্দরে পাঠানো হয়েছে। তালিকায় রাজনীতিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী এবং সাবেক আমলাও রয়েছেন। তবে এসব ব্যবসায়ী ও সাবেক আমলারা বিরোধী জোটের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। তালিকায় কয়েকজন সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধীর নামও রয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার ইমিগ্রেশন বিভাগে সাধারণত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা যাতে দেশ ছাড়তে না পারে তাদের একটি তালিকা থাকে। এটি কিছুদিন পরপরই হালনাগাদ করা হয়। সম্প্রতি এ তালিকায় বিরোধী জোটের শীর্ষ প্রায় সব রাজনীতিকের নাম যুক্ত হয়েছে। এসব তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বিদেশ যেতে বিমান ও স্থলবন্দরে গেলেই তাদের সেখান থেকে ফেরত পাঠানোর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সূত্র জানায়, তালিকায় নাম রয়েছে এমন কোন রাজনীতিক বিদেশ যাওয়ার জন্য কোন ইমিগ্রেশনে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা তা কার্যকর করেন। ইমিগ্রেশন বিভাগের নতুন এই তালিকাভুক্ত রাজনীতিকদের মধ্যে সবার বিরুদ্ধেই ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ পলাতক রয়েছেন। আবার কেউ কেউ জামিনে রয়েছেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যাদের আদালতে যেতে হতে পারে। এছাড়া মামলা ছাড়াও যারা সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত তাদের নামও তালিকায় রয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের বাইরে গেলে যাদের কর্মকাণ্ডে দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর প্রভাব পড়তে পারে কিংবা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে যারা ষড়যন্ত্র করতে পারেন বলে আশংকা রয়েছে, তাদের নামও রয়েছে তালিকায়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যারা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছেন, তাদেরও বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর সমন্বয় করে পুলিশের বিশেষ শাখা এ তালিকা তৈরি করেছে। তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দলের পদ-পদবী উল্লেখসহ ফৌজদারি মামলা, ঠিকানা ও কর্মকাণ্ডসহ বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত এসব ব্যক্তিদের সব সময় গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়।
গত ২৭শে জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুকে। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দুবাই যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন বিভাগ তাকে ফেরত পাঠায়। এর আগে ৮ই এপ্রিল জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম ও তার ভাতিজা লুৎফুল কবীরকে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হয়। তারা সৌদি আরব যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া গত ১৯শে অক্টোবর জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও তার স্ত্রী হাবিবা চৌধুরীকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। তারাও সৌদি আরবে যাচ্ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি হলেই বিদেশে যেতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা জানান, যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে কেবল তাদেরই তালিকা করা হয়েছে। যাদের তালিকায় রাখা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামি ও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত।
এদিকে গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, তালিকাভুক্তদের ওপর বিদেশে যাওয়ার বিষয় ছাড়াও গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়। তাদের বাসাবাড়ি ও অফিসে গতিবিধি অনুসরণ করা হয়। তারা কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, কোথায় কখন যাচ্ছেন তাও মনিটর করা হয়ে থাকে। সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত এসব রাজনীতিকের কারও কারও ক্ষেত্রে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নানা অজুহাতে নতুন পাসপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে বিরোধী জোটের অনেক রাজনীতিকরা পাসপোর্টও হাতে পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।