স্টাফ রিপোর্টার,
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন নেই। নারী সংসদ সদস্যদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য এলাকা ও অর্থ বরাদ্দ নেই। রাজনৈতিক দল নারীপ্রার্থী মনোনয়নে আজও উদার হতে পারেনি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সম্প্রতি ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন: রাজনৈতিক দল ও জাতীয় সংসদে
নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভা নিয়ে এই আয়োজন। জানাচ্ছেন রাবেয়া বেবী
মূ ল প্রবন্ধে বলা হয়, সরকারের নিকট নারী আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশতে উন্নীত করা, এই ব্যবস্থা পরবর্তী দুই টার্মের জন্য বহাল রাখা, এজন্য নির্বাচনী এলাকা ঢেলে সাজানো, দশম জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই এ বিষয়ক বিল সংসদে উত্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করার সুপারিশ করছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরের নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের সুযোগ ও পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকার ব্যবস্থায় নারীর সমঅংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে তাদের কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখার বিষয়ও জোর দেই আমরা। রাজনৈতিক দলের প্রতি অভ্যন্তরে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটি কমিটি, সাব কমিটি সহযোগী অঙ্গ সংগঠন প্রতিটি স্তরেই নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত বাধ্যতামূলক করা, রাজনীতি ও দলের প্রতি নিবেদিত অনুগত প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করা, প্রতিটি দলের কার্যালয়ে নারীর কর্মপরিবেশ সুস্থ ও নারীবান্ধব করার সুপারিশ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। একই সাথে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানসমূহে জেন্ডার সংবেদনশীল সংস্কৃতি চর্চাকে উত্সাহিত করা, সংবিধানের সমতার নীতিগুলো, জনকল্যাণমূলক বিষয়গুলো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত করারও সুপারিশ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। নির্বাচন কমিশনকে আগামী নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করে মহিলা পরিষদ। দেশ, সমাজ ও নারীর স্বার্থে প্রত্যেক দলের নারী সাংসদগণ জাতীয় সংসদে একটি উইমেন কক্াস গঠন করার আহবান করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
এতে অংশ নেন, দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য বেগম সাগুফতা ইয়াসমিন, বেগম জেবুন্নেসা আফরোজ, বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি এবং বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নবম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য রাশেদা বেগম হীরা। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ.এন রাশেদা, নবম জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য এবং মহিলা শ্রমিক লীগের নারী ফোরামের সভাপতি রওশন জাহান সাথি, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন্নেসা মোশারফ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আখতার এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক কাজী সুফিয়া আখ্তার।
আয়শা খানম
সভাপতি
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
রাজনৈতিক অঙ্গনে যে নারীরা আছেন, তারা একটি শক্তি হিসেবে কাজ করছেন। তাদের এই শক্তিশালী ভূমিকা নারী উন্নয়নের জন্য যেন আরও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে, তার জন্য ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে এ সকল নারীরা যেন তাদের ইতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বাংলাদেশের যারা প্রান্তিক নারী আছেন, তৃণমূল থেকে শুরু করে পার্লামেন্ট পর্যন্ত সব জায়গায় তারা যেন পায়ের নিচে একটি শক্তিশালী ভিত্তি পায় সেই লক্ষ্যে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। নারীর বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে সকলকে একমত হয়ে এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানাই আমি।
সাগুফতা ইয়াসমিন
দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য
আওয়ামী লীগ
দলে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারীর মনোনয়ন দানে দলকে বাধ্য করতে হবে। আমি একটা কথা জোর দিয়ে বলতে চাই, যখন কোন নারী পুরুষ একই পদে থাকে তখন নারী পুরুষের চেয়ে বেশি যোগ্যতা নিয়ে বেশি যুদ্ধ করে সেই পদে আসে। নারীরা নারীর সাথে সরাসরি নির্বাচন করে সংসদে আসবে। এতে লজ্জার কিছু না। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সকলক্ষেত্রে নারীর অধিকার আদায়ের জন্য দলমত নির্বিশেষে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম স্থানে আছে সার্বিক সহযোগিতা করা হলে প্রথম স্থানে যাবে। তাই আনুপাতিক হারে নারীর অংশগ্রহণ চাই। এজন্য সকল আন্দোলনে পথে নামবো পাশে থাকবো।
রাশেদা বেগম হীরা
নবম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য
বিএনপি
দুই নেত্রীর অংশগ্রহণ রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের পথ সুগম করেছে। রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নের দুটি দিক আছে দলে অবস্থান ও সংসদে প্রবেশ গম্যতা। দেশে কোন রাজনৈতিক দলই সেভাবে নারী সংবেদনশীল নয় বলে আমি এই বিষয় পিএইচডি করতে গিয়ে বুঝলাম। শুধু জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে ৫ শতাংশ নারীর নমিনেশন দেয়ার কথা নির্দিষ্ট করে লেখা আছে। নারীরা পাস করবে না এমন একটা মনোভাব পোষণ করা হয়, অথচ পুরুষ ফেল করলে কোন কথা হয় না। দলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদের অন্তত একটিতে নারী থাকা বাঞ্চনীয় করতে হবে। রাজনীতিতে অংশ নিতে হলে অর্থের প্রয়োজন তাই নারীকে আয়ও করতে হবে।
ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি
দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য
আওয়ামী লীগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথকে সুগম করতে নারী নীতি করেন। কিন্তু বিএনপি তা রোধ করতে চায়। নারী নীতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হলে এদেশে নারীরা অবশ্যই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। সকল দলকে সামন্ততান্ত্রিক মানবিকতার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের নির্দেশনা আছে। আমি এই সকল বিতর্কে না গিয়ে চলতি সংসদ অধিবেশনেই আমার দলের নারী সংসদ সদস্যদের নিয়ে স্পিকারের সাথে দেখা করে উইমেন্স ককাস গঠন করার জন্য কাজ করবো। সংসদে উইমেন্স ককাস হলে নারী সাংসদদের জন্য অনেক কাজ করা সম্ভব হবে।