‘আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য একটা সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োজন’
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০৫:৫৪,অপরাহ্ন ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | সংবাদটি ৩০৯ বার পঠিত
বিশিষ্ট অভিনেত্রী শম্পা রেজা। দীর্ঘ সময় ধরে রয়েছেন অভিনয়ের সঙ্গে। নাটক, চলচ্চিত্র সবক্ষেত্রেই সমান তালে নিয়মিত অভিনয় করে আসছেন। এখনও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। পাশাপাশি চমৎকার গানও করেন। বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আজকের ‘আলাপন’-এ কথা বলেছেন শম্পা রেজা। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মারুফ কিবরিয়া
এখন কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
বেশ কিছু সিরিয়ালের কাজ চলছে। নতুন ও প্রচার চলতি এ ধারাবাহিকগুলোতে নিয়মিত সময় দিচ্ছি। আসলে কাজের মাধ্যমে আনন্দ পাই। অন্যরকম এক ভাললাগা কাজ করে। আর তাই অভিনয়টা নিয়মিত করছি।
কোন কোন ধারাবাহিকগুলোর কাজ চলছে এখন?
‘পরম্পরা’, ‘মৃত জোনাকিরা’, ‘ফুল মহল’, ‘প্রজ্ঞা পারমিতা’ সহ আরও কয়েকটির কাজ চলছে। এছাড়া আরও কিছু কাজ আছে যেগুলোর নাম ঠিক এ মুহুর্তে মনে করতে পারছি না।
ঈদের কোন নাটকে অভিনয় করেছেন?
কোরবানির ঈদের জন্য তো কয়েকটি নাটকের কাজ আগেই শেষ করেছি। এর মধ্যে ‘ছুটি’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেছি। আর বি প্রতীমের পরিচালনায় একটি নাটকের কাজ শেষ হয়েছে।
চলচ্চিত্রের খবর কি?
ওয়াজেদ আলী সুমনের পরিচালনায় ‘সুইট হার্ট’ নামের একটি ছবির কাজ শেষ করেছি বেশ আগেই। এটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এছাড়া রুহুল আমীনের পরিচালনায় ‘হাছন রাজা’র কাজও শেষ। এটি মুক্তি পাবে শিগগিরই। পাশাপাশি শামীমা আক্তারের পরিচালনায় একটি অনুদানের ছবিতে কাজ করার কথা রয়েছ।
‘হাছন রাজা’ ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তীর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
ছবিটির গল্প আসলে তাকে ঘিরেই। মিঠুনের সঙ্গে এই প্রথম কাজ করেছি। একজন উঁচু মানের অভিনেতা এ নিয়ে তো কোন সন্দেহ নেই। তবে মানুষটা খুবই চমৎকার। আমি সত্যিই মুগ্ধ তার সঙ্গে কাজ করে।
এখনকার টিভি নাটকের মান নিয়ে আপনার অভিমত কি?
আসলে মান নিয়ে কিছু বলতে গেলে অনেক কথাই আসবে। শেষ হবে না। এখন চ্যানেল বেড়েছে। কাজের সংখ্যাও বেড়েছে সে তুলনায়। তবে মান প্রসঙ্গে বলব, কাজ ভাল হচ্ছে। আবার খারাপও হচ্ছে। দুটোর মিশেল। তবে খারাপ কাজের সংখ্যাটা কমই। আর ভাল কাজগুলো নানা কারণে খারাপের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ হলো দর্শক। তারা চ্যানেল বিমুখ হচ্ছেন নাটকের গল্পের কারণে নয়। অতিমাত্রায় বিজ্ঞাপন প্রচারের ফলে। আর এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে ভাল বাজেট নেই। যেখানে একটি নাটক করতে তিন/চার দিন সময় লাগে সেখানে দুই দিনের মধ্যে শেষ করতে হয়। আর বাজেটের টাকা যে কত হাত ঘুরে আসে সেটার কোন ঠিক নেই। যে কারণে ভাল কাজ করতে গিয়েও অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কি বলে মনে করেন?
আগেই বলেছি, এসব সমস্যার কথা বললে রাতারাতি সমাধান আসবে না। এ নিয়ে গবেষনায় বসতে হবে। দর্শক কেন দেশীয় চ্যানেল না দেখে ভারতীয় চ্যানেলের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছেন। প্রত্যেকটা চ্যানেলের প্রধানদের এ নিয়ে বসা উচিৎ। বাজেট সমস্যা ছাড়া আর কোথাও কোন খুঁত রয়েছে কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে।
আপনার কি ধারণা, এর বাইরে আরও কোন কারণ থাকতে পারে?
দেখুন, আমাদের চ্যানেলগুলো সব এই ঘরানার। কয়েকটি নিউজ চ্যানেল, আর একটি গানের চ্যানেল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাকিরা সবাই একই ধাঁচের। এক চ্যানেলেই নাটক, গান, নিউজ, নাচের অনুষ্ঠানের মিশ্রন। আপনি একবার কলকাতার চ্যানেলের দিকে নজর দিন। দেখবেন সিরিয়ালের চ্যানেল শুধু সিরিয়াল আর গানের চ্যানেলে শুধু গানই চলছে। ওদের সুষ্ঠু নিয়ম নীতি রয়েছে। যা আমাদের এখানে নেই। বিজ্ঞাপনের ওপর একটা নিয়ম দেখা যায় ওখানে। আর আমাদের এখানে এর ওপর কোন নিয়ম তো নেই-ই এমনকি নিয়ন্ত্রণেরও বালাই নেই। আমি তো কলকাতায় লেখাপড়া করেছি। সেখানে একসময় আমাদের বিটিভির নাটক দেখার জন্য মানুষ বাড়ির ছাদের ওপর এ্যান্টেনা ব্যবহার করতো। আর এখন আমাদের দর্শকরা তাদের সিরিয়াল ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তাই বলছি, আগে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য একটা সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োজন। যা করলে দর্শক ফেরানো সম্ভব হবে।
নতুনদের কেমন লাগছে?
নতুনদের বরাবরই ভাল লাগে। ট্যালেন্ট আছে অনেক। কিন্তু তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে না। তারাও সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। অভিনয় বলুন আর নির্মাণ বলুন এগুলো যে একটা সাধনা, সে জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে। তারকাখ্যাতি কিংবা পর্দায় চেহারা দেখানোই বেশি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে সবাই নয়। যাদের ডেডিকেশন আছে তারা ভাল করবে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখা উচিৎ তাহলো, প্রচুর জানতে হবে। যে যেই পজিশনে আছে সে জায়গাটা সম্পর্কে ভাল করে পড়াশোনা থাকতে হবে। তাহলে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তাদের জন্য অপেক্ষা করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আরেকটা কথা- সবার স্ব স্ব অবস্থানে থেকে অনেক বিনয়ী হতে হবে।
ব্যক্তিগত জীবন কেমন কাটছে?
আলহামদুলিল্লাহ্, অনেক ভাল আছি। ছেলে, মেয়ে, নাতনী সব নিয়ে আমি সুখেই আছি। শুটিংয়ের বাইরের জীবনটা তাদের নিয়েই কাটিয়ে দিই। বিশেষ করে নাতনীর সঙ্গে। ওই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।