উত্তরপত্রে ঘষামাজা: দ্বিতীয় তদন্তে অভিযুক্ত মতিঝিল আইডিয়ালের অধ্যক্ষ
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৩৫:৩৪,অপরাহ্ন ০৬ মার্চ ২০১৯ | সংবাদটি ৪৪৭ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক:: রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০১৮ সালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে উত্তরপত্রে ঘষামাজা করে ফেল করা পরীক্ষার্থীকে পাস করানোর অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে দ্বিতীয় তদন্তেও। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. শাহান আরাকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ এ অনিয়মের দায় এড়াতে পারেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে প্রাপ্য নম্বরের চেয়ে বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষের জবাব সন্তোষজনক নয়। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে অধ্যক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) নিজস্ব তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। সূত্র জানায়, এই প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হবে।
মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) ড. অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন,‘তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদন এবং জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন- দুটিই মন্ত্রণালয় ও দুদকে পাঠাতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উত্তরপত্রে ঘষামাজা নিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রমাণ মেলে। এরপর দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাউশির তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসনের প্রথম তদন্ত প্রতিবেদনের পর আট মাসের মাথায় দ্বিতীয় তদন্ত প্রতিবেদন মাউশিতে জমা হলো।
এ বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘গত মাসের (ফেব্রয়ারি) মাঝামাঝি সময় তদন্ত প্রতিবেদন মাউশিতে জমা দিয়েছি।তদন্তে ঘষামাজার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফেল করা পরীক্ষার্থীকে প্রাপ্য নম্বরের চেয়ে বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে।চূড়ান্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে।প্রতিবেদনে আমরা বলেছি— অধ্যক্ষ এসবের দায় এড়াতে পারেন না।’
মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্রে জানা গেছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০১৮ সালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় কোনও কোনও শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রের ভুল উত্তর রাবার দিয়ে মুছে সঠিক উত্তর লিখে ওই প্রশ্নে নম্বর দিয়ে পাস করানোর অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন অভিভাবক শ্যামলী সিমু। মাউশির মহাপরিচালকের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেন কয়েকজন। দুটি অভিযোগেই বলা হয়, তিন কোটি টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ফেল করা পরীক্ষার্থীকে পাস করানো হয়েছে।
শ্যামলী শিমুর অভিযোগটি তদন্তের জন্য গত বছরের ১৯ এপ্রিল ঢাকা জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসন তদন্ত করে ওই বছরের ৮ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে। ওই তদন্তে ঘষামাজার প্রমাণ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত বছরের ২৩ এপ্রিল চার সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মাউশি। সেই তদন্ত কমিটির প্রধান মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ। এই তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত জমা দেওয়ার জন্য মাউশির মহাপরিচালককে কয়েক দফা তাগিদ দেয় মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে কয়েক দফা চিঠি দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি তদন্ত প্রতিবেদনই চায় মাউশির কাছে।
দ্বিতীয় দফা তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত ও মন্তব্যে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট সকলের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য এবং জব্দ করা উত্তরপত্র থেকে পাওয়া তথ্য-প্রমাণে পরিলক্ষিত হয়েছে যে, পরীক্ষার উত্তরপত্রে কাটাকাটি, ওভার রাইটিং ও ঘষামাজা রয়েছে। উত্তরপত্রে লিখিত বিষয়ের বিভিন্ন প্রশ্নে পাওয়া নম্বরের চেয়ে অনেক বেশি নম্বর দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে যা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণে বিবেচনার অবকাশ রাখে। এ বিষয়ে অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়টি উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া প্রথম শ্রেণি ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি যেহেতু প্রতিযোগিতামূলক ও স্পর্শকাতর সেহেতু এমন কার্যক্রম যথাযথ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া যেনতেনভাবে সম্পাদন করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের জবাব সন্তোষজনক নয় এবং তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের দায় প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তিনি পুরোপুরি এড়াতে পারেন না।’
প্রতিবেদনের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ক্যাম্পাস মতিঝিলে। বনশ্রী ও মুগদায় দুটি আউটার ক্যাম্পাস রয়েছে। এসব ক্যাম্পাসে ইংরেজি ভার্সন আছে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আলাদা তিনটি ক্যাম্পাসে মূলধারা বাংলা ভার্সন এবং ইংরেজি ভার্সন চলমান রয়েছে। প্রতিটি ক্যাম্পাসে দিবা ও প্রভাতী নামে শিফট চালু রয়েছে। এতে একটি স্কুল ও কলেজকে কৌশলে ডালপালা বিস্তার করে ছয়টি প্রতিষ্ঠানে ১২টি শিফটে রুপান্তর করা হয়েছে।
ড. শাহান আরা বেগম প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বাইরে আছি কথা বলতে পারবো না।’পরে দুই দফা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি আর ফোন ধরেননি।