পুলিশ কেন জনগণের বন্ধু নয়?
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪৩:৩২,অপরাহ্ন ১৮ মার্চ ২০১৯ | সংবাদটি ৪১৭ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক:: ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। গতকালই ঘটল এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ রকম ঘটনার মুখোমুখি আগে কখনো হইনি। রাত তখন সাড়ে ১০টা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পার হয়ে বিজয় সরণি মোড় গিয়ে পৌঁছলাম। এর মধ্যে সিগনাল পড়েছে। গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আমরা গণভবনের দিকে যাবো।
সিগনাল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভার গাড়ি টান দিল। এ সময় বাঁ দিক থেকে একটি গাড়ি আমার গাড়ির সামনে দিয়ে ইউ টার্ন নিতে যাচ্ছিল। যা পুরোপুরি বেআইনি। যা হওয়ার তাই হলো। দুই গাড়িতে ঘষা লাগল। দুই ড্রাইভারের মধ্যে কিছুক্ষণ তর্কাতর্কির পর অপর গাড়ির যাত্রী এক ভদ্র মহিলা বললেন, যা হয়েছে, হয়েছে। এবার চলো। অন্য গাড়ি টান দিতে যাচ্ছিল।
এ সময় ট্রাফিক পুলিশ সামনে এসে বলল, কোথায় যাচ্ছ? দাঁড়াও। তারপর কিছু একটা বলল। শুরু হলো ওই ড্রাইভারের ফোনাফুনি। এর মধ্যেই এলেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর। শুরুতেই ক্ষ্যাপাটে কণ্ঠে ড্রাইভারকে উদ্দেশ করে বললেন, এই তোর গাড়ির কাগজ দে। তাড়াতাড়ি দে। কই, এতো দেরি কেন? দে তাড়াতাড়ি?
আমি তখন গাড়ি থেকে নামলাম। ইন্সপেক্টর সাহেবকে বললাম, আপনি আমার গাড়ির কাগজপত্র চাচ্ছেন? ন্যায় অন্যায় দেখবেন না?
ইন্সপেক্টর বললেন, ন্যায় অন্যায় দেখার দায়িত্ব আমার না।
আমি বললাম, আপনার তাহলে দায়িত্ব কী?
ইন্সপেক্টর বললেন, আমার দায়িত্ব ট্রাফিক কন্ট্রোল করা।
আমি বললাম, তাই বলে রাস্তায় কেউ আইন ভঙ্গ করবে, আমি আপনি তা দেখবেন না?
ইন্সপেক্টর বললেন, আপনি আপনার গাড়ির কাগজপত্র দিতে বলেন।
আমি তখন আমার বিশেষ পরিচিত একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোন করলাম। তাকে ঘটনাটা বললাম। তিনি বললেন, ওরা যা কাগজপত্র চায় তা দিয়ে আপনি চলে যান।
আমি বললাম, তারপরও আপনি ইন্সপেক্টরের সঙ্গে কথা বলেন। ইন্সপেক্টরকে আমার মোবাইলটা দিলাম। তিনি দূরে সরে গিয়ে বললেন, স্যার আমি তাকে সম্মান দিয়েই কথা বলছি। কোনো রকম অসম্মান করিনি। তবে তার গাড়ির সঙ্গে আরেকটা গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। সে কারণে রাস্তা জ্যাম হয়ে গেছে। আসলে দুটি গাড়িই রাস্তার পাশে ছিল। অন্য গাড়ির যাতায়াতে কোনো সমস্যা হয়নি।
যা হোক, আমি ভাবলাম, ওই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলে দেয়ার পর ইন্সপেক্টর সাহেব কিছুটা শান্ত হবেন। কিন্তু না, তিনি থোরাই কেয়ার করলেন। তিনি বললেন, দুই গাড়িই থানায় যাবে।
এর মধ্যে আমাদের ক্রাইম রিপোর্টার তেজগাঁও থানার ওসিকে ফোন দিলেন। তিনি একজন ইন্সপেক্টর পাঠালেন। তার মধ্যে বেশ কিছু লোক (সন্দেহভাজন) জড়ো হয়ে গেলো। গাড়ি দুটি রাস্তার পাশে নেওয়া হলো। সন্দেহভাজন লোকগুলো অপর গাড়ির লোকদের সঙ্গে ভিড়ে গেলেন। এবার টাকা পয়সার দেনদরবার চলছে।
ওসি সাহেবের পাঠানো ইন্সপেক্টর বুঝতে পারলেন, ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। আরেকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করলাম আমাদের এক রিপোর্টারের অনুরোধে। তিনি ফোন ধরেই বললেন, আপনার জন্য কি করতে পারি। আমি পুরো ঘটনাটা বললাম। শোনার পর বললেন, তো, আপনি সমস্যা মিটিয়ে ফেলেন!
আমি বললাম, নিজে মেটাতে পারছি না। কারণ, পুলিশ পরিস্থিতিটা জটিল করে ফেলেছে। সে কারণেই আপনার সহযোগিতা চাচ্ছি। তিনি বললেন, তাহলে আপনাকে অভিযোগ করতে হবে। গাড়ি থানায় যাবে। সেখানে উভয়পক্ষের কথা শুনে মিটমাট করা হবে।
আমি বললাম, আপনার সহযোগিতা চাওয়া ভুল হয়ে গেছে ভাই। আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আমি রাখি।
ফোন রেখে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলাম। দেখলাম, উটকো লোক বাড়াবাড়ি করছে। ওপর গাড়ির মালিককে নানাভাবে উসকানি দিচ্ছে।
তেজগাঁও থানার ইন্সপেক্টর সাহেবকে বললাম, তাহলে গাড়ি থানায় নিয়ে চলেন।
এর মধ্যে গাড়ির মালিকের বড় ভাই এলেন। তিনি এসেই বললেন, ভাই আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। আসলে গাড়ি চলতে গেলে উভয় ড্রাইভারের দোষেই দুর্ঘটনা ঘটে। আপনি সম্মানীয় মানুষ। আপনাকে এভাবে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখাই অন্যায় হয়েছে। আপনি চলে যান।
সঙ্গে সঙ্গে উটকো লোকগুলো ক্ষেপে গিয়ে বললেন, আপনাকে এখানে কে ডেকেছে? আপনি দেখছেন কত বড় ক্ষতি হয়েছে?তিনি বললেন, ঠিক আছে আমি গাড়িটা তাহলে দেখে আসি?
আমি বললাম, যান।
তিনি গাড়ি দেখে আবার এলেন। এসে বললেন, যা ক্ষতি হয়েছে ওটা তেমন কিছু না। আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।
আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে যে ভদ্রমহিলা ছিলেন (আমার অর্ধেক বয়সের) তাকে সালাম দিয়ে বললাম, আসলে রাস্তাঘাটে চলতে গেলে এরকম হতেই পারে। আপনার যেহেতু কোনো অভিযোগ নেই! আমারও নেই। আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রায় পৌণে এক ঘণ্টার জটিলতা কাটিয়ে রাত সাড়ে ১১টায় বাসায় ফিরলাম।এবার আপনারাই বলুন, পুলিশ যদি বন্ধু হতো তাহলে ঘটনাটা এতোদূর গড়াত? আর আমার সঙ্গেই পুলিশ এতোকিছু করতে পারল! সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাহলে কি করে? ( আমিও নিতান্তই সাধারণ একজন নাগরিক)
কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামালের ফেসবুক থেকে