সিলেটে স্টিট ফুডের রমরমা ব্যবসা
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২৫:৩১,অপরাহ্ন ২৩ মার্চ ২০১৯ | সংবাদটি ৪৮৬ বার পঠিত
মাসরুর রাসেলঃ নগরীর নয়াসড়ক এলাকার র্গিজার সামনের রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ টংয়ে বারবিকিউ তৈরিতে ব্যস্ত এক যুবক। পাশে দাঁড়িয়ে আরেকজন অর্ডার নিচ্ছেন, ক্রেতাদের পরিবেশনও করছেন। ক্রেতাদের অনেক ভিড় এখানে। লাইন ধরে পছন্দের খাবার কিনছেন তারা। একই চিত্র দেখা যায় সড়কের অপর পাশে কিশোরী মোহন বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের আরেকটি দোকানে।
সিলেট নগরের অনেক স্থানেই এখন এমন দৃশ্য দেখা যায়। বিশেষত সন্ধ্যার পর নগরীর বিভিন্ন সড়কের পাশে আধুনিক-সুসজ্জিত টংগুলোতে ভিড় করছেন ভোজনপিয়াসী নগরবাসী। দ্রুতই নগরবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে স্ট্রিট ফুড। বছরখানেকের মধ্যেই নগরীর বিভিন্ন সড়কের পাশে গড়ে ওঠেছে স্ট্রিট ফুডের বেশকয়েকটি দোকান।
সিলেট নগরবাসীর কাছে আগে বাইরে খাওয়া মানেই ছিলো রেস্টুরেন্টে খাওয়া। কেবল ফুচকা আর চটপটি খাবার জন্যই সড়কের পাশের টং দোকানগুলোতেই ভিড় করতেন নগরবাসী। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তন এসেছে নগরবাসীর খাদ্যাভ্যাসের। ফার্স্টফুডের জন্যও তারা এখন বেছে নিচ্ছেন সড়কের পাশের অস্থায়ী দোকানগুলো।
স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে বেশকয়েকটি নগরীতে জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। ক্রেতা চাহিদা মেটাতে নিজেদের একাধিক শাথাও খুলে বসেছে স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলোর কয়েকটি।
বছর খানেক ধরে জিন্দাবাজার ও রিকাবিবাজারে চটপটি ফুচকার পাশাপাশি ফ্রাইড চিকেন, নুডুলসসহ বাহারি ফার্স্টফুডের কিছু ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান চালু হয়। তবে বর্তমানে শুধু এই দুই এলাকা নয়, নগরীর নয়াসড়ক, শাহী ঈদগাহ রোড, টিলাগড়, মদিনা মার্কেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে বসেছে স্ট্রিট ফুডের দোকান। অপেক্ষাকৃত স্বল্প মূল্যে সুস্বাদু খাবার খেতে এখন সন্ধ্যারপর থেকেই ভিড় লাগে এই স্ট্রিট ফুডের দোকাগুলোতে।
৭ বন্ধু মিলে আড্ডা দিতেন নয়াসড়ক গির্জার সামনে রাস্তার ফুটপাতে বসে। সবাই গ্রাজুয়েশন শেষ করেন একসাথে। তাদের মধ্যে কয়েকজন অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন। বন্ধুরা মিলে প্রায়ই কারো না কারো বাসায় বারবিকিউ পার্টি করতেন। একদিন এই গির্জার সামনে বসেই আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তাদের একজন বললেন বারবিকিউ এর ভ্রাম্যমাণ দোকান দেওয়ার কথা। তার কথায় সবাই সায় দিলেন। বন্ধুরা মিলে শুরু করলেন ‘এইচটুও’ নামে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান।
বলা যায় অনেকটা শখের বসেই গত বছর ২৬ নভেম্বর শুরু করেন এই ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান। সিলেটে তারাই প্রথম স্বল্প মূল্যে ভ্রাম্যমাণ বারবিকিউ দোকান চালু করেন। কয়লার আগুন দিয়ে গ্রাহকের সামনেই তৈরি করে দেন বারবিকিউ। ১০০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে বারবিকিউ পাওয়া যায় ‘এইচটুও’ তে। বারবিকিউ ছাড়াও কাবাব, মাংসের বিভিন্ন আইটেম ও পরটা পাওয়া যায় তাদের দোকানে।
‘এইচটুও’-এর প্রোপাইটর নাহিয়ান বলেন, ‘আমরা মনে করি কোনো কাজই ছোট নয়। ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু করার আছে আমাদের। আমাদের দেশে অনেক বেকার গ্রাজুয়েট আছেন। লেখাপড়া করে চাকরি পাচ্ছেন না। বেকার ঘুরাফেরা করছেন। তাদেরকে বলতে চাই বেকার না থেকে কাজ শুরু করেন। অল্প পুঁজি দিয়েই শুরু করেন। সফলতা আসবেই।’
নয়াসড়কে কিশোরী মোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আছে ‘শেখস ডাইন’ নামে আরেকটি ভ্রাম্যমাণ পিজ্জার দোকান। এমসি কলেজে অধ্যয়নরত পাঁচ বন্ধু মিলে চলতি বছর ১১ জানুয়ারি শুরু করেন এই ভ্রাম্যমাণ পিজ্জার দোকান।
সিলেটে পিজ্জা খেতে হলে যেতে হয় পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে নামীদামী রেস্টুরেন্টে। স্কুল কলেজ পড়–য়া ছেলে মেয়ে কিংবা সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরের খাবার পিজ্জা। তাই কম খরচে সবাইকে পিজ্জার স্বাদ দিতে তারাও শখের বসে শুরু করেন এই পিজ্জার দোকান। ১৯০ ও ১৯৫ টাকায় ৮ ইঞ্চি পিজ্জা পাওয়া যায় ‘শেখস ডাইন’ এ। পিজ্জা ছাড়াও চিকেন চাপ, চিকেন শর্মা, কলকাতা রুল, ফ্রাইড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পানিপুরি, নাগা ফুচকা, পরটা ও লুচি পাওয়া যায় এই ভ্রাম্যমাণ দোকানে।
শখের বসে শুরু করা এই ভ্রাম্যমাণ পিজ্জার দোকানে এখন সন্ধ্যা থেকেই থাকে গ্রাহকদের ভিড়। দোকানের মালিকের সাথে কথা বলার সময় সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যায়ণ একদল ছাত্রী আসেন পিজ্জা খেতে। তাদের মধ্যে একজন মৌসুমি। তিনি বলেন, ‘কম মূল্যে এত ভালো মানের পিজ্জা তাও আবার সিলেটের রাস্তায় পাওয়া যায় সেটা অভাবনীয়। আগে তো স্ট্রিট ফুড মানে চটপটি আর ফুচকাই ছিল একমাত্র ভরসা। এখন এই দোকানগুলোর মাধ্যমে সিলেটের স্ট্রিট ফুড ব্যবসার চিত্র বদলে দিয়েছে। তারা যে মানের খাবার দিচ্ছেন। সে মানের গ্রাহকও আসছেন।’
‘শেখস ডাইন’ এর প্রোপাইটর সাইদুর রহমান। এমসি কলেজে গণিতের ২য় বর্ষের ছাত্র সাইদুর। ভ্রাম্যমাণ এই দোকানে তারা বন্ধুরা নিজেরাই রান্না ও পরিবেশন করেন। সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করেন।
সাইদুর বলেন, আমি গণিতে পড়লেও এই ব্যবসা করার ইচ্ছা ছিল। ঢাকায় দেখেছি এমন অনেক ভ্রাম্যমাণ খাবার দোকান আছে। ফেসবুক ইউটিউবের কল্যাণে এসব উদ্বুদ্ধকরণ ব্যবসা এখন নিজের ফোনেই দেখা যায়। এসব দেখেই এই ব্যবসার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। তাই আমরা ৫ বন্ধু মিলে এই ভ্রাম্যমাণ দোকান দেই।
তিনি বলেন, এটি অনেক সম্ভাবনাময় ব্যবসা। আমার ইচ্ছা আছে বড় ধরনের ব্যবসা করার। তাই অধ্যাণরত অবস্থায় ছোট ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছি। লেখাপড়ার পাশাপাশি এই ধরনের কাজে নিজেদের নিয়েজিত রাখলে যুব সমাজ খারপ পথে যাবে না। পাশাপাশি লেখাপড়া শেষ করে কি করবে সেই চিন্তাও থাকবে না।