১০ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র এসেছে মালয়েশিয়া থেকে
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৫৩:৩৬,অপরাহ্ন ২০ জানুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ৩৮৭ বার পঠিত
8
অবশেষে ১০ হাজার কর্মী নেওয়ার চাহিদাপত্র এসেছে মালয়েশিয়া থেকে। ৯টি প্রতিষ্ঠানে ওই বিশাল সংখ্যার কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এসেছে। শুরুতেই প্লানটেশন খাতে ১০ হাজার কর্মী নিতে মালয়েশিয়া সরকার চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। এর মাধ্যমে ২০০৮ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ থাকা শ্রমবাজারটিতে কর্মী পাঠানো শুরু হবে। শুধু তাই নয়, দেশের জনশক্তি রপ্তানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কাজের চুক্তিপত্রে সই করার অধিকার পাচ্ছেন মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীরা। এমনকি মালয়েশিয়ার শ্রম আইন অনুযায়ী বেতন-ভাতাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধাও পাবেন তাঁরা। চাহিদাপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিনিধির পক্ষ থেকে কর্মীর চাহিদাপত্র পেয়েছেন, সেই কপি বাংলাদেশে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসের শেষের দিকে অনলাইনের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের প্রথম ব্যাচ মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়তে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এর আগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সব প্রস্তুতির কথা জানিয়ে গত ১২ জানুয়ারি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে সব ধরনের কারিগরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মালয়েশিয়া। দ্রুত বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। মালয়েশিয়া সরকারের ওই চিঠির জবাবে বাংলাদেশ সরকারের সব প্রস্তুতির কথা জানিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়া সরকারের কাছে আরেকটি চিঠি দেয় বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। দুই দেশের সরকারের মতৈক্যের ফল হিসেবেই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য বেসরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর বন্ধ দরজা খুলে গেল। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের মুখপাত্র ও শ্রম কাউন্সিলর মো. সাইদুল ইসলাম চাহিদাপত্র হাতে পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতিতে কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তাই পরীক্ষামূলকভাবে আমরা কিছু কাজ সত্যায়ন করছি। অনলাইন সিস্টেম ঠিক থাকলে শিগগির অন্যান্য খাতেও বিশালসংখ্যক কর্মী যাওয়া শুরু হবে। ’
বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় ১০ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র আমরা পেয়েছি। এসব কর্মী প্লান্টেশন খাতে নেওয়া হবে। মালয়েশিয়ার ৯টি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী প্লান্টেশন খাতে কর্মী নিচ্ছে তারা। পরে অন্যান্য খাতেও কর্মী পাঠানো শুরু হবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘এবার সম্পূর্ণ অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হবে। যার কারণে কোনো প্রতারণা হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। কর্মী যে কারখানা কিংবা প্রতিষ্ঠানে যাবে সেই কম্পানির সঙ্গে পৃথক চুক্তিপত্রেও সই করবে। এটা বাংলাদেশের জন্য প্রথম। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই পদ্ধতিতে কর্মী মালয়েশিয়ায় গেলে কাজের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাঁর বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঠিকমতো পাবেন।
তবে বায়রার একাধিক সদস্য ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়াকে আমরাও সমর্থন করি, কিন্তু মালয়েশিয়ায় হাতে গোনা ১০টি প্রতিষ্ঠান সেখানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠাবে এটা ঠিক নয়। এতে তৃণমূল পর্যায়ে অভিবাসন ব্যয় তিন থেকে চার লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান এতে লাভবান হবে। বায়রার সদস্যরা জানান, বায়রার যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, ওই সব প্রতিষ্ঠানের সবাই যেন মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তবে বায়রার সভাপতি রুহুল আমিন স্বপন বলেন, ‘কোনো সিন্ডিকেট নয় বরং জালিয়াতি এবং সিন্ডিকেট ভাঙতেই অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হবে। কোন এজেন্সি কর্মী পাঠাবে সেটা মালয়েশিয়ার সরকার নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই। আশা করছি অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী গেলে অভিবাসন ব্যয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রতারণা কমবে এবং শ্রমিকের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ’
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর সুযোগ রেখে উভয় দেশের মধ্যে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির পরের দিনই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি কর্মী নেওয়া আবারও বন্ধ ঘোষণা করে। কয়েক মাস আগে বিদেশি কর্মী না নেওয়ার ঘোষণাটি প্রত্যাহারের পর ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তির আলোকে কর্মী প্রেরণের বিষয়টি আবারও সামনে আসে। প্লান্টেশন, এগ্রিকালচার, ম্যানুফাকচারিং, কনস্ট্রাকশনসহ মোট পাঁচটি খাতে বিপুলসংখ্যক কর্মী নেওয়ার ঘোষণা রয়েছে মালয়েশিয়া সরকারের। বিগত দিনগুলোতে স্পেশাল কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া হতো। এখন থেকে সোর্স কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ সারা বছরই বিভিন্ন সেক্টরে কর্মী পাঠাতে পারবে।
শতভাগ অনলাইনের সহায়তায় কর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবে মালয়েশিয়া সরকার। বাংলাদেশের অনুকূলে যে চাহিদাপত্র ইস্যু হয়েছে তাতে তিন বছর কাজের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা টানা ১০ বছর পর্যন্ত নবায়ন করা যাবে। কর্মীর দৈনিক কর্মঘণ্টা হবে আট ঘণ্টা, চাইলে ওভারটাইম করা যাবে। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের শ্রম আইন শতভাগ প্রযোজ্য হবে। কর্মীর মাসিক বেতন চুত্তিপত্রে যা উল্লেখ থাকবে তাই-ই দেওয়া হবে। আর বেতন-ভাতার টাকা কর্মীর হাতে নয়, কর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের সরকারের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বার্তা চলে যাবে। অনলাইন প্রক্রিয়ার কারণে একটি ধাপের সঙ্গে অন্যটি ম্যাচ না করলে সিস্টেম কাজ করবে না বলে জানা গেছে।