নির্বাচন কমিশন ঠিক হয়ে যাও, নতুবা বউর উপরে আর উঠতে পারবা না
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০১:১৭,অপরাহ্ন ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | সংবাদটি ২২৩৬১০ বার পঠিত
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
প্রিয় পাঠক, উপরের হেডিংটি আমার নয়, প্রয়াত সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মহসীন আলী সাহেবের কাছ থেকে ধার নেয়া। তিনি জীবিতাবস্থায় একটি ঐতিহাসিক বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই বক্তেব্যে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,
টাকা খাও আরেকজনের আর মহসীন আলীর পু—–বাঁশ দাও, যেতা মন চায় লিখিওনা। আমার নেত্রী কইছন ইনু ভাই অইলাগি ১৪ দলের নেতা আর আমরার মহসীন আলী ভাই অইলাগি আওয়ামীলীগের তৃনমুল নেতা। সেদিন কেবিনেটে আমি থাকলে আরো গলা চিপি ধরলামনে পুয়ান্তর রস বের করে ছেড়ে দিতাম। খবিশ হকল। সিলেট আমার শশুর বাড়ী যেই সেই শশুর বাড়ী নয়। তোমাদের বিরুদ্ধে চেতাইতে আমার সময় লাগতানায়। পরে আর বউর উপরে উঠতা পারতায় নায়————-।
সবেক মন্ত্রীর এ বক্তব্য যদিও পুরো সাংবাদিক সমাজকে সরাসরি গালি ছিল তারপরও সাংবাদিকদের মান ইজ্জত কিছুই যায়নি। এক মইনুল হোসেন সাহেবের চরিত্রহীন বলার পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই ফুঁসে উঠেছিল। কি আজব একটি দেশ, আজব দেশের সাংবাদিক, আজব দেশের প্রধানমন্ত্রী। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন মামলা একটা কেন আরো বেশী বেশী করে মামলা করুন। আমরা দেখবো। হ্যাঁ দেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মইনুল হোসেন সাহেবেকে গ্রেফতার করা হলো। ছাত্রলীগের ছেলেরা তাকে লাঞ্চিত করলো। এখন শুনেছি তাকে নাকি জামিন দেয়া হয়েছে, তার সব মামলা স্থগিত করা হয়েছে আগামী ৬ মাস। বাংলাদেশেই বোধহয় রাজনৈতীক প্রতিহিংসা মূলক মামলা স্থগিত হয়? না অন্য কোনো দেশে মামলা স্থগিত হওয়ার বিধান আছে? আমি জানিনা। শুনেছি তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা যখন ছিলেন তখন নাকি মইনুল হোসেন সাহেব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলেন। ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তিনি প্রতিশোধ নিয়েছেন। সবাই প্রতিশোধ নেয় এটাই সত্যি। আজ আমার, কাল তোমার।
অনেকেই বলেন পশ্চিমা দেশের নেতা নেত্রীরা নাকি প্রতিশোধ নেয়না বা নিতে চায়না। আমার কাছে সেটি মনে হয়নি। বেশী দিন আগের কথা নয়। বৃটেনের টনি ব্লেয়ার সাহেব যখন লেবার পার্টির নেতা হয়েছিলেন তখন কথা ছিল গর্ডন ব্রাউন নেতা হবেন এবং তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু পার্টির অপর নেতা পিটার মেন্ডেলসন টনি ব্লেয়ারের সাথে হাত মিলানোর পর লেবার পার্টির রাজনীতি অন্যদিকে মোড় নেয়। ছিটকে পড়েন গর্ডন ব্রাউন। ১৯৯৭ ইংরেজীর নির্বাচনে টনি ব্লেয়ারের নিউ লেবার যখন নিরস্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বৃটেনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তখন টনি ব্লেয়ার সহ লেবার পার্টির সবাই খুশী হলেও একজন খুশী হননি, তিনি ছিলেন গর্ডন ব্রাউন। যেখানে কথা ছিল গর্ডন প্রধানমন্ত্রী হবেন সেখানে ব্লেয়ার হলেন প্রধানমন্ত্রী আর গর্ডন হলেন অর্থমন্ত্রী। কি আর করা? ক্যথলিক ধর্মে একটি কথা রয়েছে ফরগেট এন্ড ফরগিভ। ভুলে যাও মাফ করে দাও। গর্ডন ব্রাউন ভুলে গেলেও মাফ করে দেননি। তিনি পিটার মেন্ডেলসনের টনি ব্লেয়ারের সাথে হাত মিলানোর কথা মনে রেখেছিলেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিন থেকেই তিনি সুযোগ খুঁজছিলেন কিভাবে পিটার মেন্ডেলসনকে সাইজ করা যায়। বছর দুয়েকের মধ্যেই তিনি পেয়ে যান সুযোগ, মেন্ডেলসন প্রভাব খাঁটিয়ে বাড়ির মর্গেজ নিলে ব্রাউন তা মিডিয়ায় জানিয়ে দেন। শুধু মর্গেজের ব্যাপার ছিলনা, হিন্দুজা পাসপোর্ট ক্যালেংকারীতেও মেন্ডেলসন জড়িয়ে পড়লে তা ও মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছিল ব্রাউনের ঈশারায়। টনি ব্লেয়ারের সরকার এবং পার্টি চরম বেকায়দায় পড়েছিল, টনি ব্লেয়ার মেন্ডেলসনকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন, মেন্ডেলসন একবার নয় দুবার তিনি মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। টনি ব্লেয়ারের সরকার তখন তাকে নিয়ে চরম বিব্রত এবং বেকায়দায় পড়ার পর শেষ অবদি মেন্ডেলসনকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কমিশনার নিয়োগ দিয়ে ব্রাসেলসে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। হিন্দুজা পাসপোর্ট কেলেংকারীতে আরেকজন জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে সেসময় অভিযোগ উঠেছিল, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অনেকের বন্ধু ভারতীয় বংশোদ্ভুত তৎকালিন সময়ে মিনিষ্টার ফর ইউরোপ জনাব কীথভাজ এমপি, তবে হেমেন্ড ইনকোয়রিতে কিথভাজের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ না পেলেও কীথভাজের রাজনৈতিক জীবনের সেখানেই পরিসমাপ্তি হয়েছিল।
অনেকেই বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যারিষ্টার মইনুল সাহেবেকে সাইজ করার জন্য দীর্ঘদিন থেকেই একটি সুযোগ খুঁজছিলেন সেই সুযোগ তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন মাসুদা ভাট্রিকে দিয়ে। দেশের পুরো সাংবাদিক সমাজকে যারা আওয়ামীলীগ সরকারের বেনিফিসিয়ারি সাংবাদিক তাদেরকে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন। সাংবাদিরাও এমন শেইমলেস যেখানে মহসীন আলী সাহেব এত বাজে কথা বলার পর ও একটা সাংবাদিক রাস্তায় নামেনি, প্রতিবাদ করেনি সেখানে মাসুদা ভাট্রির মত সাংবাদিককে রাজনৈতিক চরিত্রহীন বলায় কি তুলকালাম কান্ডই না আমরা দেখলাম।
সে যাক, বসেছি নির্বাচন কমিশন নিয়ে লিখতে কিন্তু কথার পিঠে কথা চলে আসে। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য আমার পাঠকরা আশা করি শুনেছেন, তিনি বলেছেন যারা পর্যবেক্ষক আসবেন তারা কোনো কথা বলতে পারবেনা। তারা ব্রিটিশ পুলিশের মত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। কোনো সাংবাদিক ইন্টারভিউ করতে পারবেনা, লাইভ করতে পারেবনা। কারণ লাইভ করলে সারা বাংলাদেশের মানুষ নাকি তাদের চেহারা দেখবে। এসব বক্তব্য রেখে তিনি বলেছেন, আমি কি আপনাদের বুঝাতে পেরেছি?
মাননীয় নির্বাচন কমিশনার, আমি আসলে আপনার বাংলা ভাষাার বক্তব্য বুঝতে পারিনি। কেউ মোবাইল নিতে পারবেনা, কেউ ছবি তুলতে পারবেনা, কেউ লাইভ করতে পারেবনা। কেউ যদি কিছু না করতে পারে তাহলে পর্যবেক্ষক কেন যাবে? কেন সাংবাদিক সেখানে যাবে? তারা কি উর্দু ভাষায় চুল কে যা বলে তা কি ছিঁড়তে যাবে? মাননীয় নির্বাচন কমিশনার, আপনারা কার পারপার্স সার্ভ করছেন? আওয়ামীলীগের না বাংলাদেশের? জানেন তো আপনাদের বেশ আগে আজিজ সাহেব নামক এক নির্বাচন কমিশনার ছিলেন, তাকে সাংবাদকিরা যখন জিজ্ঞ্যাস করতো কোনো খবর আছে? তিনি বলতেন নারে ভাই কোনো খবর নেই, পেট ও গরম মাথাও গরম। তিনি আজ কোথায়? একটু খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করুন। ইতিহাসের পাতায় যারা মীরজাফরের নাম লেখায় তারা যতই ভালো সাজার চেষ্টা করুক না কেন তারা মীরজাফর হিসেবেই খ্যাতি অর্জন করে। তাদেরকে মানুষ মুল্যায়ন করেনা। বাংলাদেশে অতীতে খন্দকার মোশতাক সাহেবকে মানুষ মুল্যায়ন করেনি। এবারের নির্বাচন কিন্তু যেই সেই নির্বাচন নয়। আপনাদের ভূল সিদ্ধান্তের কারণে যদি লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায় তাহলে সেটির দ্বায়ভার কে বহন করবে? আমি যেটি বুঝতে পারছি এবারের নির্বাচনে কোনো ধরণের ভোট ডাকাতি কোনো ধরণের পক্ষপাতিত্ব করলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে।
মাননীয় নির্বাচন কমিশনার, এ পর্যন্ত আপনার সব বক্তব্য আপনার সব কার্যকলাপ আওয়ামীলীগের পক্ষে যাচ্ছে বলে বিএনপি সহ অপারপর দলগুলো অভিযোগ করছে। কিন্তু বি চৌধুরী স্যারের মুখে যখন শুনি নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নেই তখন তো আমার মত মানুষ আঁতকে উঠে। ডঃ কামাল হোসেন সাহেবের মত লোক যখন বলেন নির্বাচনের আগের রাত থেকে কেন্দ্র পাহাড়া দিতে হবে তখন তো আমার মত অনেকেই শংকিত হন, চোখে ঝাপসা দেখেন।
আপনার দল আওয়ামীলীগ ১৬০ টি আসনে জিতে সরকার আবারো গঠন করতে চায়? নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যদি আওয়ামীলীগ জিতে আমাদের কারো তো সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু আপনার মাধ্যমে, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যদি ভোটের এদিক সেদিক হয় তাহলে গোটা জাতীকে মাশুল দিতে হবে। আমি আশা করি আপনারা সেদিকে যাবেননা। আমি নির্বাচন নিয়ে অনেক কিছুই চিন্তা করছি। আপনার দলের নেতাদের বক্তব্য শুুনুন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে উবায়দুল কাদের সাহেব সহ সবাই বলছেন ক্ষমতায় না আসলে চামড়া থাকবেনা। চামড়া বাঁচানোর জন্য কি যেনতেন ভাবে নির্বাচন করে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় বসানো? কবরদার কমিশনার মহোদয় সেটি ভুলেও করতে যাবেননা। ওয়ান ইলেভেনের কথা মনে আছে? বিএনপির দৌড়ের কথা মনে আছে? ভালো নির্বাচন করুন দেখবেন মানুষ হাজার বছর মনে রাখবে। মাগুরা মার্কা নির্বাচন করলে মানুষ কিন্তু মনে রাখবেনা।
মানুষ তাহলে বলবে ঐ যে আমাদের মাননীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মহসীন আলী স্যার যেভাবে সাংবাদিকদের বলে গেছেন
“ঠিক হই যাও সাংবাদিক পুয়াইন, যেতা মনচায় কইরোনা, যেতা মনচায় লিখবানা। তোমাদের বিরুদ্ধে সিলেটের মানুষকে চেতাইদিতে আমার সময় লাগতো নায়। সিলেট আমার শুশুর বাড়ী যেই সেই শশুর বাড়ী না।———–।
তাই বলি কি আপনাদের বিরুদ্ধে জনরোষ যদি বিগড়ে যায় জনগণ যদি রেগে যায় তাহলে আমির্, র্যাব, পুলিশ দিয়ে কত লোককে হত্যা করবেন? কত লোককে গ্রেফতার করবেন? সব কিছুরই সীমা আছে সব কিছুরই শেষ আছে। সব শেষের পরে যদি মানুষ আপনাদেরকে ধরে উত্তম মধ্যম দিয়ে দেয় তাহলে কিন্তু সৈয়দ মহসিন আলী স্যারের ভাষায় ”আর বউর উপরে উঠতা পারতায়নায়”……….|
লেখক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ।
লন্ডন ১৩/১২/২০১৮ ইংরেজী