জাহান্নামের আগুনে বসে নির্বাচনকে নিয়ে পুস্পের শেষ হাসি কি হাসতে পারবে আওয়ামীলীগ?
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৫:৩৩,অপরাহ্ন ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ | সংবাদটি ৯০২০৩ বার পঠিত
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
(এক)
১৪ ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডঃ কামাল হোসেন সাহেব একজন সাংবাদিককে যে ধমক দিয়েছেন আমি সেটির তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তিনি কোনোভাবেই একজন সাংবাদিককে ধমক দিতে পারেননা। একজন সংবাদ কর্মী সে প্রশ্ন করতেই পারে। তার অধিকার রয়েছে প্রশ্ন করার। উত্তর দাতারও উত্তর না দেয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু উত্তর না দিয়ে সেখানে তাকে দেখে নিব, জেনে রাখলাম এসব অবান্তর কথা বলার কোনো যুক্তি আছে বলে মনে করিনা। আমাকে অনেকেই বলেন আমি ঐক্যফ্রন্টের সমর্থক, আমি কামাল হোসেন সাহেবের সমর্থক। যারা বলেন তাদের আমি কেয়ার করিনা। কারণ তারা আওয়ামীলীগ সরকারের চাটুকার সাংবাদিক অথবা সমর্থক। তারা ফেইসবুকে লিখে। ফেইসবুকে যারা লেখে তাদেরকে আমি লেখক মনে করিনা। লেখক হতে হলে তাকে অবশ্যই যে কোনো একটা সংবাদপত্রে লিখতে হবে। নীতি নৈতিকতা থাকতে হবে, আদর্শ থাকতে হবে। ন্যায় অন্যায় বুঝতে হবে। দলদাশ দলকানা হলে চলবেনা।
গত সপ্তাহের আমার লেখার হেডিং এর অনেকেই সমালোচনা করেছেন, আমি নিজেই অনেকটা বিব্রত। কিন্তু উপায় ছিলনা। সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছিলেন প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলী। তিনি তখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। সিলেটে যে অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য রেখেছিলেন, সেই অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দরাও ছিলেন তারা মহসীন আলী সাহেবের বক্তব্য শুনে হাত তালি দিয়েছিলেন। ভিডিও ক্লিপটি এখনো আছে, যারা দেখেননি তারা ভালো করে দেখে নেওয়ার অনুরোধ করছি। আমাকে অনেকে বলেছেন, মহসিন আলী সাহেব মারা গেছেন, তিনি সব বিতর্কের উর্দ্ধে চলে গেছেন তাকে নিয়ে টানা হেচরা কেন? কথাটি সত্য। আমি টানতে চাইনা। কিন্তু মহসীন আলী সাহেব জীবিতবস্থায় এই বক্তব্যের জন্য কি দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন? সরকারের তরফ থেকে কি দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছিল? করা হয়নি। সাগর রুনির হত্যা কান্ডের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি বলেছিলেন? বলেছিলেন কারো বেডরুম পাহারা দেয়া সরকারের দায়িত্ব নয়। সাগর রুনির হত্যা কান্ডের বিচার হয়েছে? হয়নি। ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাহেব বহাল তবিয়তে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আছেন। টেলিভিশনের লাইসেন্স পেয়েছেন। সাগর রুনির রক্তের উপর দাড়িয়ে ভদ্রলোক কি করে মন্ত্রী হন আমি বুঝিনা। মন্ত্রী হওয়ার কি এতই খায়েশ? আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এক শ্রেণীর চাটুকার সাংবাদিকের জন্ম হয়েছে। তারা এমনভাবে প্রধানমন্ত্রীকে তৈল মর্দন করে যা দেখলে লজ্জা ও লজ্জা পায়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গোলাম সরওয়ার সাহেবের চাটুকারিতা জাতি অনেকদিন মনে রাখবে। বাংলাদেশের দুভার্গ্য যখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকে তখন সবাই জিয়া জিয়া বলে চিৎকার করে, আর যখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় তখন বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু বলে চিৎকার করে!!!! চামচামী করে। একজন সাংবাদিকের কাজ কি? গঠনমূলক সমালোচনা করা। আজ যদি কামাল সাহেবের বক্তব্যের আমি প্রতিবাদ না করি তাহলে বিবেকের কাছে আমি দংশিত হবো। আমি অবাক হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি, হঠাৎ করে কামাল হোসেন সাহেব বিগড়ে গেলেন কেন? সাংবাদিকের কাজ কি বিগড়িয়ে দেয়া, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা কিন্তু বেয়াদব নন। তারা শ্রদ্ধা রেখে কথা বলে, প্রত্যেক নেতা নেত্রীকে স্যার ম্যডাম বলে সম্বোধন করে। অপর দিকে, নেতা নেত্রীরা খবিশ চরিত্রহীন থেকে শুরু করে —-পোলা গালি দিতেও কার্পণ্য করেনা। নারায়নগঞ্জের শামীম ওসমান সাহেবের ভাই সেলিম ওসমান সাহেবের সেদিন একটি ভিডিও ক্লিপ শুনলাম। হায়রে গালি গালি কাহাকে বলে? এত অকথ্য ভাষায় মানুষ মানুষকে গালি দিতে পারে তা ছিল আমার কল্পনার বাইরে।
অথচ বহিবিশ্বে সাংবাদিকদের কেউ গালি দিতে পারেনা। গালি দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। বৃটেনে একবার হোম সেক্রেটারী ছিলেন মাইকেল হাওয়ার্ড। সম্ভবত ১৯৯৬/৯৭ ইংরেজী হবে। হোম সেক্রেটারীকে বলা হয় স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী। যারা আমলা ছিলেন তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল হাওয়ার্ডকে জানিয়ে দিলেন ক্রাইম কমানো যাবেনা। মাইকেল হাওয়ার্ড বলেছিলেন ক্রাইম কমাতে হবে। যেহেতু তিনি স্বররাষ্টমন্ত্রী তিনি গাইড লাইন দিলেন কিভাবে ক্রাইম কমাতে হয়। স্বাভাবিকভাবে আমলারা মনক্ষুন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু মাইকেল হাওয়ার্ড জয়লাভ করেছিলেন। মাইকেল হাওয়ার্ড তখন থেকে আলোচিত সমালোচিত। প্রিজন সার্ভিসের চেয়ারম্যান ডুরিক লুয়িসকে নিয়ে জেরিমি প্যক্সম্যান ১২ বার একই প্রশ্ন করেছিলেন কিন্তু মাইকেল হাওয়ার্ড তো বিগড়ে যাননি। জেরেমিকে বলেননি কেন তুমি একই প্রশ্ন ১২ বার করো? সাংবাদিকের কাজই হচ্ছে প্রশ্ন করা ভালো লাগলে উত্তর দিবেন না লাগলে বলবেন অন্য প্রশ্ন করুন।
ফেইসবুকে দেখলাম যে সাংবাদিক কামাল হোসেন সাহেবকে প্রশ্ন করেছেন শেখ হাসিনা তাকে বাহবা দিচ্ছেন। সৈয়দ মহসীন আলী যখন সাংবাদিকদেরকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছিলেন আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনা মহসীন আলী সাহেবেকে একান্তে ডেকে নিয়ে বলেছেন সাবাশ মহসীন ভাই ভালো বলেছেন পুয়ান্তর রস বের করা দরকার।
(দুই)
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামীলীগ যা দেখিয়েছে তাতে বুঝতে হবে যিনি নির্বাচন পরিচালনা করছেন তার বুদ্ধি আছে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুঝিয়েছেন প্রথমে মনোয়নপত্র বাতিল করতে হবে তারপর এটা যদি কাজে না আসে তাহলে মার দিতে হবে, মারের উপরে তো আর কোনো ঔষধ বাজারে এখনো অবিস্কার হয়নি। যদি হতো তাহলে নোয়াখালিতে মাহবুব উদ্দীন খোকন সাহেবের নির্বাচনী প্রচার অভিযানে পুলিশের ওসি গুলি করে কিভাবে? নির্বাচন কমিশন তো পুরোই একটা ফাউল। যদি ফাউল না হতো তাহলে এ রকম অবস্থা হয় নাকি? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে হবে। আমি বলি কি আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে আপনারা কি করবেন । বিগত ১০ বছরে শুধু ব্যাকিং সেক্টরে লুটপাট হয়েছে ২২ হাজার পাঁচশত দুইকোটি টাকা, আরো পাঁচ বছরে আপনারা না হয় আরো দশহাজার কোটি টাকা লুটপাট করবেন, বেস্ট হলো আপানার এই দশ হাজার কোটি টাকা লুট পাট না করে দেশকে সমূহ যন্ত্রণা এবং লজ্জা থেকে মুক্তি দেন প্লিজ। নির্বাচন নিয়ে বিদেশী কেউই এখন কথা বলতে চায়না। এবার সব এম্বেসী কিন্তু নীরব হয়ে গেছে। নীরব হবেনা? একটা নির্বাচন করতে পারেনা পাচ বছর পর পর ভানু মতির খেলা শুরু করে দুটি দলই, আমি ,শুধু আওয়ামীলীগের কথা বলছিনা বিএনপিরও সমস্যা ছিল। আমি বুঝিনা ক্ষমতায় না থাকলে চামড়া থাকবেনা, ক্ষমতায় না থাকলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে, এসব বাজে কথা কেন বলেন নেতা নেত্রীরা? ১৯৯১ সালেও নির্বাচন হয়েছে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে এ রকম তো অবস্থা ছিলনা। চেতনার ব্যবসা আর ধর্মীয় ব্যবসার কারণে দেশ আজ এক মারমুখি অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। এর জন্য দায়ি কে? আওয়ামীলীগ সভানেত্রীকে যিনি বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছেন তাকে সবিনয়ে বলি সব সময় মার দিলে কাজ হয়না। উন্নয়ন করেছেন বলে চিৎকার করলে তো হবেনা। উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন ছিল কি-না তা তো দেখতে হবে। হয়তো উন্নয়ন কিছুটা হয়েছে কিন্তু সুশাসনের তো বালাই ছিলনা। প্রতিহিংসার আগুনে দুটি দল জ¦লছে। এখন যদি বিএনপি ক্ষমতায় যায় যতই সুশাসনের কথা বলা হোকনা কেন মানুষ তো কিছু মরে যাবে। কারা মরবে আওয়ামলীগের লোক মারা যাবে, যাতে লোক মারা না যায় সে ব্যবস্থা কে করবে? ঐক্যফ্রন্ট? ঐক্যফ্রন্টের প্রধান কে ডঃ কামাল হোসেন সাহেব। ডঃ কামাল হোসেন সাহেব যদি ক্ষমতায় যান আমার বিশ্বাস দেশে অন্তত আর যাই হোক না কেন মানুষ মরবেনা। প্রতিহিংসার আগুনে পুড়বেনা ঐক্যফ্রন্ট। আর আওয়ামলীগ যদি পুনরায় ক্ষমতায় যায় তাহলে কি হবে? ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই মানুষের উপর অত্যাচার শুরু করেছে। এবার ক্ষমতায় গেলে কি হবে? তবে নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়াটা যতটা সহজ মনে করেছিল আওয়ামীলীগ ততটা সহজ কিন্তু নয়। একমাত্র আমেরিকার রাষ্ট্রদুত ছাড়া কেউই কিন্তু মাথা ঘামাচ্ছেনা , আমেরিকান রাষ্ট্রদুত অনেকটাই কনসার্ন মারামারির ব্যপারে। আমাদের দেশের মানুষের একটা বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে বিদেশীরা একটি দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে। না সেটা নয়। আওয়ামীলীগ যতই বলুক ইন্ডিয়া তাদের সাথে এগুলো মিথ্যা কথা। ইন্ডিয়া নিজের ঘর সামলানো দায় পড়েছে। এবার কেউই কনসার্ন না এবার আমেরিকা সহ সবাই কনসার্ন হচ্ছে একটি সুষ্ঠ অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। আবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে আওয়ামীলীগ কয়টা সিট পাবে? আমি জানিনা। এটা জানেন দেশের মানুষ দেশের ভোটাররা।
বিঃ;দ্রঃ নির্বাচনের আর বেশীদিন বাকী নেই। ১০ দিন আছে সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন কাকে ভোট দিবেন। আমার অনুরোধ থাকবে যাকেই ভোট দিবেন বুঝে শুনে ভোট দিবেন। ভোটকে যদিও বলা হয় আমানত আসলে এটি একটা শ্লোগানে পরিণত হয়েছে। কে একজন আমাকে ইনবক্সে পাঠিয়েছিল আমার ভোট আমি দেব তোমার ভোটও আমি দেব সবারভোট আওয়ামীলীগ দিবে। এসব কথা আজ কেন বলছে মানুষ কারণ ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচন। এসব ভোটার বিহীন নির্বাচন থেকে দেশকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকেও দেশকে বেরিয়ে এসে সুন্দর রাজনীতির জন্ম দিতে হবে।
লেখক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
১৯/১২/২০১৮ ইংরেজী লন্ডন