মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমি কি হাইকোর্ট কে উষ্টা মারতে পারি? হাইকোর্টের গুষ্টি কিলাইতে পারি?
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৩৩:৫৮,অপরাহ্ন ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ | সংবাদটি ৯৩৪৯৪ বার পঠিত
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
আমার এক পাঠকের ফোন – ফয়সল ভাই লেখালেখি করে কি কোনো লাভ হয়? মানুষ কি এসব লেখা পড়ে? আপনার লেখা কি সমাজকে পাল্টাবে? এই যে বাংলাদেশে এত সাংবাদিক এত টেলিভিশন এত পত্রিকা কোনো পরিবর্তন হয়েছে? নির্বাচন আসলেই মানুষ মরে! একটা নির্বাচন করতে পারেনা বাংলাদেশ! একটা সরকার গঠন করতে পারেনা, পাঁচ বছর পর পর কি মারামারি শুরু হয়রে বাবা? এ কেমন দেশ? এ কেমন সভ্যতা? বলে পাঠক একটু থামলেন, তারপর জিজ্ঞাস করেন আপনি কি লাইনে আছেন? বললাম বলে যান, তিনি বলতে শুরু করলেন, এই যে সিলেটের ইলিয়াস আলী সাহেবের স্ত্রীর মনোয়ন আঠকে দিলো হাইকোর্ট, অথচ সরদার এনামুল হকের মনোয়ন বৈধ এক দেশে দু‘আইন একই কোর্টে দুটি আইন চলে কি করে? আরেকটি কথা নির্বাচন নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা দেখালেন তা কি নিকট অতীতে বাংলাদেশে ঘটেছে? বলেছিলাম পাঁচ বছর আগে ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে! সে নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ নিত তাহলে আজ আওয়ামীলীগ যা করছে তা হয়তো করার সাহস পেতনা। পাঠক বললেন, নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি বলেই এ অবস্থা? নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি বলে খুন গুম হবে? বলেছিলাম কিসের গুম বললেন ইলিয়াস আলী সাহেবকে তো বর্তমান সরকার গুম করেছে? ইলিয়াস বিরোধী যারা তারা বলেন, যে যেমন কর্ম করে সে তেমন ফল পায় জ্ঞানি গুনীরা তাই কইয়া যায়। ইলিয়াস আলী সাহেবও নাকি কম করেননি। আমাকে একজন বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনের সামনে, টিএসসির সামনে অস্ত্রের মহাড়া ইলিয়াস আলী সাহেব এবং অভি সাহেবই প্রদর্শন করেছিলেন, ফকিরাপুলের পানির ট্যাংকে গলিত লাশ সবই তো ৯০ দশকের স্বাধীন বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির গৌরব উজ্জল ইতিহাসের অংশ? এরশাদ সাহেবের শাসনামলের শেষের দিকে যে সব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঢাকায় ঘটেছে এসব অবশ্য এখন আর ঘটেনা। সে সময়কার সন্ত্রাসীদের নামের একটি তালিকা এখনো আমার মনে আছে, মুরগী মিলন, লেদার লিটন, সুইডেন আসলাম, পিচ্চি হান্নান, কালা ঝাহাংঙ্গীর, কোত্তা শিশির সহ অনেকেই তখন ছিল ঢাকার নামকরা মস্তান। এদেরকে পৃষ্টপোষকতা করতেন আমাদের জাতীয় নেতারা। ৯১ এর দিকে খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন এদের যন্ত্রনায় তিনি ছিলেন অতিষ্ট।
আমি পাঠককে বলেছিলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব সময়ই কিছু না কিছু ঘটনা দুর্ঘটনা ছিল আছে এবং থাকবেই। দোষ এককভাবে কাউকে দিয়ে লাভ নেই। আজকের যে নির্বাচন এ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামীলীগ যা দেখালো তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আওয়ামীলীগ মরণ কামড় দিচ্ছে নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করার, এবং অনেকেই বলছেন সরকার তারা যে কোনো মুল্যে গঠন করে ফেলবে। বাংলাদেশের সবাই নাকি তাদেরকে সহযোগিতা করবে যাতে তারা সরকার গঠন করতে পারে। পাঠক বললেন, তাহলে কি ন্যায় অন্যায়ের কোনো মুল্য নেই? কোনো অন্যায় যদি হয় তাহলে মানুষ কোথায় যাবে? কার কাছে বিচার চাইবে? বলেছিলাম দেশের সর্বোচ্চ কোর্ট হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টে যাবে, পাঠক রাগান্বিত হয়ে বললেন হাইকোটকে উষ্টা মারি, বললাম মারেন উষ্টা, তারপর চিন্তা করলাম হাইকোট কে কি উষ্টা মারা যায়? পাঠককে বলেছিলাম আমি উষ্টার ব্যাপারটি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে জিজ্ঞাস করবো তিনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আপনি উষ্টা একটা মেরে দিতে পারবেন। তিনি আরো রাগান্বিতস্বরে বললেন, হাইকোর্টের গুষ্টি কিলাই। বলেছিলাম তা ও পারবেন কিন্তু তারজন্যও মহামান্য রাষ্ট্রপতির পারমিশন লাগবে, পাঠক বললেন সব কিছুতেই রাষ্ট্রপতির পারমিশন লাগবে? বলেছিলাম অবশ্যই লাগবে। কারণ রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন দেশের সর্ব্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি বঙ্গভবনে বসবাস করেন। আপনি দেশের সর্ব্বচ্চ আদালতকে উষ্টা মারবেন? এটা কেমন কথা? দেশের সর্ব্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানকে শ্রদ্ধা করতে হবে। আমরা বিচারের জন্য হাইকোর্টে যাবো সুপ্রিম কোর্টে যাবো!
পাঠক বললেন, যেখানে দেশের প্রধান বিচারপতিকে লাত্তী মারে দেশ থেকে বের করে দেয় সে দেশের হাইকোট সুপ্রিম কোর্ট আছে নাকি? আমি পাঠকের কথায় অনেকটা বিব্রত। কারণ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সাহেবকে যেভাবে টেনে হেঁচড়ে শেখ হাসিনার সরকার বিদেশ পাঠিয়েছে তা বোধ হয় দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো ঘটেনি। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিল সে সবের কি হলো? যে পাঁচজন বিচারপতি বলেছিলেন তারা প্রধানবিচারপতির সাথে আর বসবেননা সে সবের কি হলো? আসলে আওয়ামীলীগ সরকার যা করেছে সব কিছুই সংবিধান মেনেই করেছে। সব কিছুরই তো নিয়ম কানুন আছে। আওয়ামী সরকার যাই করেছে নিয়ম নীতির মধ্যে থেকেই করেছে। আওয়ামীলীগ সরকার যে গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেছে ভোটারবিহীন একটি সরকার তা-ও নিয়মের ভিতরে থেকেই ক্ষমতায় থেকেছে। এই যে ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং সেক্টরে লুটপাট করেছে তা ও করেছে নীয়মনীতির মধ্যে থেকে। এই যে ষ্টক মার্কেট লুটপাট করেছে তা-ও নিয়মের ভিতরে থেকেই করেছে। এই যে মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় সারাটা বছর জুড়ে রাবিশ, ননসেন্স, বোগাস বলেছেন সবই তো নিয়মের ভিতরে থেকেই করেছেন এবং বলেছেন। আরেকটা বিষয় খুবই উল্লেখযোগ্য নিয়মের ভিতরে তো ছিলই, তার উপরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর দাড়িয়ে সব কিছু করেছে। আর যা হয়েছে সব কিছুই হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারণে, দেশ পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর কারণে, ভাষা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর কারণে, তিনিই হচ্ছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। এখন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এগিয়ে তিনিই নিতে পারবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন হাসেন বাংলাদেশ তখন হাসে, প্রধানমন্ত্রী যখন কাঁদেন তখন সারা বাংলাদেশ কাঁদে।
অপর দিকে বলা হচ্ছে ”তুমি যখন ভয় পাবে তুমি তখন শেষ, তুমি যখন প্রতিবাদ করবে তুমিই বাংলাদেশ”
শেষ কথাঃ
নির্বাচনের বাকী আর মাত্র পাঁচ দিন। এই পাঁচ দিনে কি করবে আওয়ামীলীগ? তাদের আর কি করার বাকী আছে? হাইকোর্ট থেকে আর কার কার নমিনেশন বাতিল করার বাকী আছে সবই শেষ করতে হবে আওয়ামীলীগকে। এত নির্লজ্জ বেহায়াদের মত কেউ ক্ষমতায় থাকার জন্য এত কিছু করে তা আমার জানা ছিলনা। পৃথিবীর কোনো ইতিহাসে নির্বাচন নিয়ে এত ভানুমতির খেলা কেউ খেলছে বলে আমার মনে হয়না। যা দেখালো আওয়ামীলীগ আর যা দেখালো আওয়ামলীগের দালাল মিডিয়া। আমার মনে থাকবে অনন্তকাল চিরকাল। এরশাদ সাহেবের সময় বলা হয়েছিল বিশ্ববেহায়াদের খপ্পরে বাংলাদেশ। আমি বলি বিশ্ববেহায়া ক্ষমতালিপ্সুদের খপ্পরে বাংলাদেশ। হে বাংলাদেশ তুমি আমাদের ক্ষমা করো।
লেখক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
২৪/১২/২০১৮ ইংরেজী লন্ডন