শেখ হাসিনা নৌকা ভিড়াও আমি ডঃ কামাল হোসেন – লন্ডনে হাউস অব লডর্সের অনুষ্ঠান
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪৩:৪৪,অপরাহ্ন ৩১ অক্টোবর ২০১৮ | সংবাদটি ৬৭১৫৬ বার পঠিত
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
গত ২০শে অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টা, স্থান হাউস অব লর্ডসের চামেলী স্যুট। বৃটিশ কমিউনিটি অনার এওয়ার্ডের আমন্ত্রিত অতিথি আমি। এসব অনুষ্ঠানে যেতে এখন আর ভালো লাগেনা। বাঙালী কমিউনিটির অনেকেই আছে যারা টিকেট কিনে এসব অনুষ্ঠানে যান। আমার বিরক্ত লাগে। বিরক্ত লাগার কারণ আছে, আর কত? তা ছাড়া আমার যদি কোনো কাজ না থাকে তাহলে কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে শোভা-বর্ধিত হবো কেন? তারপর ও যেতে হয়, ঐ যে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করি আমরা। শরীর ভালো নেই তারপরও বলতে হয় ভালো আছি। দেশ ভালো নেই, দেশে গনতন্ত্র নেই, সুষ্ঠ রাজনীতি নেই, শ্রদ্ধা নেই, ভালোবাসা নেই, বিশ্বাস নেই, একে অপরের প্রতি মায়া নেই, মহব্বত নেই, তারপর ও বলতে হয় ঠিক আছে, সব ঠিক মত চলছে। নির্বাচন নেই, ভোটার নেই, তারপরও বলি আমরা ভোট ঠিক মত হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা বলেছি ভোট ঠিক মত হয়েছে, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহন ছিল স্বতস্ফূর্ত , বিএনপি না আসলে করার কিছুই নেই। ২০১৪ সালের আগে আমার টিভি টক শো ষ্ট্রেইট ডায়লগে সাবেক আইনপ্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাহেবকে জিজ্ঞাস করেছিলাম ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে কি বিএনপি আসবে? তিনি বলেছিলেন অবশ্যই আসবে দেখুন না কি হয়। কামরুল সাহেবের ভাব ছিল শুধু বিএনপি না বিএনপির বাপ দাদা চৌদ্দগোষ্টি আসবে। কেউই আসেনি নির্বাচনে। ভোট দিতেও মানুষ যায়নি, যারা ছিল তারা ছিল কুকুর, বিড়াল, গরু ছাগল। গৃহপালিত একটি দল এরশাদ সাহেবের, সকালে বলেন এক কথা বিকেলে বলেন আরেক কথা তাকে নিয়েই নির্বাচন হলো, জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হলো, রওশন এরশাদ বিরোধী দলীয় নেত্রী হলেন। তারপর তিনি একদিন বললেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টিকে আপনি নিয়ে নেন। নতুবা আমাদেরকে মুক্তি দেন!!! এ সব কথা কি বিশ্বের কোনো পার্লামেন্টে বিরোধীদল বলেছে? বলেনি। বলার কথা না। বিরোধী দলের কাজ কি সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা।
সে যাক, হাউস অব লর্ডসে ব্রাডফোর্ডের লর্ড প্যাটেল স্বাগত বক্তব্য রাখলেন। তারপর একে একে এওয়ার্ড দেয়া হলো আমার টেবিলে বসেছিলেন অক্সফোর্ডের এক বিজ্ঞানী তিনি প্রথম আমাকে জিজ্ঞাস করেন, আমি কি করি? বললাম, শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা, রাজনীতি আমি একটু এড়িয়ে চলি। কারণ রাজনীতি নিয়ে কথা বললে সম্পর্ক নষ্ট হয়। মতের মিল হয়না, বেহুদা তর্ক। এক সময় বিতর্ক কুতর্ক ভালো লাগতো, এখন মনে হয় দুর… সরিয়া মর। যেই ক্ষমতায় যায় সেইই শুরু করে দেয় ফাজলামী। এসব ভালো লাগে? আর রাজনীতিবীদ যারা তারা মনে করেন তারা যা বুঝেন পৃথিবীর মানুষ আর কিছই বুঝেনা, নেতা যা করেন চামচারা বলে সাবাস। স্পেসিয়েলী বাংলাদেশের মানুষ। ইদানিং আপনি যদি ফেইসবুক ঘাটেন দেখবেন এক শ্রেণীর মানুষের অতিকথন, বিশেষণের পর বিশেষণ, হায়রে বিশেষণ এসব বিশেষণ যার নামের পিছনে দিচ্ছে তার নামের সাথে যাচ্ছে-কি-না তার কোনো ধার কেউ ধারেনা। অমুখ ভাইকে আমরা এমপি দেখতে চাই। অমুখ ভাই নিজেই লিখছেন হয়তো, অন্য ফেইসবুক আইডি দিয়ে। আরেকটি কাজ কারবার শুরু হয়েছে ইদানিং ঐক্যফ্রন্টের নেতাদেরকে নিয়ে, লন্ডনে এটি বেশী হচ্ছে ডঃ কামাল হোসেন, সুলতান মনসুর আহমদ সাহেব, মাহমুদুর রহমান মান্না সাহেবেকে নিয়ে সমালোচনা। ডঃ কামাল হোসেন কিছুই করতে পারবেননা। তিনি সব সময় বিদেশে চলে যান, ওরা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া ইত্যাদি। এই সব যারা বলেন তারা কি একবার ভেবে দেখেন যারা বাংলাদেশে রাজনীতি করে তারা কারা? কি তাদের পরিচয়? তারা কি করেছে দেশের জন্য? তারা কি আসলেও ভালো মানুষ? তারা কি সৎ? সমালোচনা যারা করেন তাদের নিজস্ব কিছু ষ্টাইল আছে, তারা কেউ বা করেন বিএনপি কেউ বা করেন আওয়ামীলীগ। ওরা কখনো দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে বের হতে পারেনি, আরে বাবা কামাল হোসেন সাহেব ঐক্য ফ্রন্ট করেছেন একটু সময় তো দিতে হবে, দেখা যাক কি করেন তিনি। নিরাপদ দুরত্ব থেকে সমালেচানা। নিজে কিছুই করতে পারেনি, বিয়ে করে লন্ডনে এসেছে, অথবা লন্ডনে স্থায়ী হয়েছে, নিজে বিয়ে করে লন্ডনে না আসলে দেশে থাকলে কি করতো? মানুষ যখন অন্যের সমালোচনা করে তখন নিজের দিকে থাকায়না। দেশটাকে দুটি দল লুটে পুটে খেয়েছে, এরশাদ সাহেবের শাসনমালেও দুর্নীতি ছিল, কিন্তু এতটা ছিলনা। একটি নির্বাচন করতে পারেনা, একবার বলে পার্লামেন্ট রেখেই নির্বাচন হবে, আরেকবার বলে সরকার রেখেই নির্বাচন হবে। এ সব ফালতু কথা বলার দরকার কি? নির্বাচনেরই বা দরকার কি? একাবারে বললেই তো হয় যে নির্বাচন আসলেও আমরা চাইনা। আমরা যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় থাকতে চাই ২০১৪ সালের মত।
সে যাক, পাশের টেবিলে বসা আরেকজন সাবেক কুঠনৈতিক খুব মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথা শুনছিলেন। ডিনারের সময় তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে বেশ কিছু কথা জিজ্ঞাস করলেন, আমি যতটুকু পেরেছি উত্তর দিয়েছি, কুঠনৈতিক যা বলেছেন আমি যদি এসব লিখি তাহলে দেশে গৃহ যুদ্ধ বেঁধে যাবে। তিনি কিছু তথ্য আমাকে দিয়েছেন রাষ্ট্র কাঠামো কিভাবে চলছে এবং কারা চালাচ্ছে ইত্যাদি। আমি শুধু শুনেছি, কোনো কিছুই তর্ক করিনি। আমরা অনেক কিছু না বুঝে বলি, না বুঝে করি। কুঠনৈতিকের কথা শুনে মনে হয়েছে বাংলাদেশটা যদি কামাল হোসেন সাহেবরা চালাতেন তাহলে দেশ অনেকটা উন্নতীর চরম শিখরে পৌঁছে যেত। কামাল হোসেন সাহেবদেরও দোষ গুন আছে তাই বলে তাদেরকে যা ইচ্ছে তাই বলাটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত ভেবে দেখা দরকার। ইদানিং শুনছি আরেক কথা, শুনছি ডঃ কামাল হোসেন সাহেব নাকি সিনহা সাহেবের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছেন, কথাটি কতটুুক সত্য জানিনা। তবে শেখ হাসিনা সরকারের জন্য সব কিছুই সম্ভব। যারা বিনা ভোটে নির্বাচন করে পাঁচ বছর কাটিয়ে দেয়ার পর লম্বা লম্বা কথা বলে। কেউ কিছু বললে প্রতিবাদ করলে হয় তিনি খুন, না হয় তিনি গুম, না হয় তিনি জেলে। এ অবস্থায় একটি দেশ চলতে পারেনা। আওয়ামীলীগের মন্ত্রী এমপিদের কথা শুনলে পেটের ক্ষুদা এমনিতেই চলে যায়, তারা এমনভাবে কথা বলেন মনে হয় দেশটা তাদের বাপ দাদার সম্পত্তি। এখন দেশে নাকি সবাই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু নাকি সব করেছেন। আর কেউ কিছুই করেনি। তর্কের খাতিরে যদি তর্ক করি তাহলে জেনারেল ওসমানী সাহেবের কি কোন অবদান নেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে? এক সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে জিয়াউর রহমান সাহেবের নামে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে তখন সব কিছু জিয়াউর রহমান সাহেব করেছেন, আর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে সব করেছেন বঙ্গবন্ধু। বাকিরা বসে বসে তামাসা দেখেছেন।
সে যাক, হাউস অব লর্ডসের অনুষ্ঠানে আমাকে সাবেক ঐ কুঠনৈতিক বলেছিলেন বাংলাদেশটা একটি সম্ভাবনাময় দেশ ছিল কিন্তু নেতৃত্বের অদুরীদর্শীতা প্রতিহিংসার রাজনীতি, প্রথম শ্রেনীর অযোগ্য অপদার্থদের দাপট এবং সর্বপোরী পার্শ্ববর্তী একটি দেশের বড়ভাই সুলভ আচরণ দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে দেয়নি। বিএনপি এবং আওয়ামলীগের ভারত এবং পাকিস্তানপন্থী গভীর প্রেম দেশটাকে ক্রমেই পিছনের দিকে টেনে নিচ্ছে। তা ছাড়া কে স্বাধীনতার ঘোষক, কে জাতীর পিতা, কে জাতীর মাতা, কে ম্যজিক লেডি, কে দেশ রত্ন কে দেশ মাতা, কে দেশ নায়ক, কে ডিজিটাল নায়ক, কখন স্বাধীনতা দিবস, কখন বিজয় দিবস, কখন ভাষা দিবস, কখন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস এসব কুতর্ক জাতীকে ক্রমেইে পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসব কুতর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর থেকে শুরু করে রাস্তার টোকাই পর্যন্ত জড়িয়ে পড়ে। জিন্দাবাদ আর জয় বাংলা শ্লোগান নিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তর্ক করে তখন আমার মনে হয় আমার কাছে যদি কোনো ক্ষমতা থাকতো তাহলে এদের পাছায় লাত্তী মেরে ব্শ্বিবিদ্যালয় থেকে বের করে দিতাম। এসব কথা অসংখ্যবার লিখেছি। একটি দেশের সর্ব্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সেখানে যখন শিক্ষকরা চামচামী করে তখন লজ্জা ও লজ্জা পায়।
অনুষ্ঠান শেষে বের হওয়ার সময় সেই কুঠনৈতীক আমাকে বললেন ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়া দরকার বাংলাদেশে। সেটি যদি ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে হয় তাহলে ভালো, নির্বাচনের মাধ্যমে হয় তাও ভালো, আমি বলেছিলাম ক্ষমতার তো কোনো পরিবর্তন আমি দেখছিনা, আওয়ামীলীগ অনেকটা শক্ত অবস্থানে রয়েছে। দেশে এবং বিদেশে, কুঠনৈতীক বললেন বিদেশ বলতে কি বুঝাও? বলেছিলাম ইন্ডিয়া! তিনি বলেছিলেন ইন্ডিয়া ছাড়াও তো অনেক দেশ রয়েছে। তিনি বলেছিলেন কিছু দিনের মধ্যে বিশ্বরাজনীতিতে পরিবর্তন হবে, পরিবর্তন হলে সেটির প্রভাব বাংলাদেশেও গিয়ে পড়বে।
প্রিয় পাঠক, ওয়েস্টমিনিষ্টারের হাউস অব লর্ডস থেকে রাত ১১ টার দিকে বেরিয়ে যখন আমি ট্যাক্সিতে উঠবো তখন পিছন থেকে কে যেন বলে উঠে “শেখ হাসিনা নৌকা ভিড়াও আমি ডঃ কামাল হোসেন“, যিনি বলেছিলেন তাকে আমি দেখতে পাইনি, তিনি রাতের অন্ধকারে ওয়েস্টমিনিষ্টার এবের দিকে চলে গেলেন আমি তার চলে যাওয়াটা দেখলাম তিনি অনেকদুর গিয়ে পিছনের দিকে থাকালেন আমি তাকে হাত ঈশারা করে ডাকলাম তিনি শুনলেন, তিনি দেখলেন, কিন্তু আমাকে পাত্তা দিলেননা। তিনি কে? তিনি কি বঙ্গবন্ধু? তিনি কি ভাসানী? তিনি কি ওসমানী তিনি কি জিয়াউর রহমান? তিনি কি শেরে বাংলা? আমি জানিনা, তবে তিনি হতে পারেন————–।
লেখক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ