কামাল হোসেন স্যার, কি অর্জন করলেন ফালতু সংলাপ থেকে???
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০৬:২৭,অপরাহ্ন ০৭ নভেম্বর ২০১৮ | সংবাদটি ৮৮৪৮৮ বার পঠিত
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী
গত ১/১১/২০১৮ ইংরেজী বৃহস্পতিবার ছিল বহুল আলোচিত সমালোচিত ঢাকার রাজনৈতিক সংলাপ, আমি জরুরী কাজে লন্ডন থেকে নাটিংহামের ট্রেন ধরেছিলাম। সেন্টপাংক্রস ষ্টেশন থেকে ট্রেন ধরে আমি গন্তব্যে পৌঁছি বেলা ২টায়। কাজ শেষ করে আবার লন্ডনে ফিরে আসি। আমার সাথে ছিলেন আমার এক সাদা বন্ধু। আমি বার বার ফেসবুক অন করে সংলাপের খবর জানার চেষ্টা করেছিলাম, আমার সাদা বন্ধুটি কিছুটা বিরক্ত ছিলেন, কারণ আমরা যে কাজে যাচ্ছিলাম সেটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাদা বন্ধুটির ধারনা ছিল আমি আমাদের কাজের কোনো গুরুত্ব না দিয়ে শুধু ঢাকার খবরের জন্য উদগ্রীব। সাদা বন্ধুটির কথা হচ্ছে ঢাকার খবর পেতে তোমাকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অতএব বন্ধু আমার উপর বিরক্ত। বিরক্ত হলে আমার করার কিছুই ছিলনা। আমি ফেসবুক দেখছি তো দেখছিই। এক সময় দেখলাম নব্য কিছু আওয়ামীলীগাররা ফেস বুকে আজে বাজে কমেন্ট করা শুরু করেছেন। এক সময় দেখলাম বিএনপি নেতারা অরেঞ্জ জুস পান করছেন। সেই অরেঞ্জ জুস নিয়েও সমালোচনা। অরেঞ্জ জুস পানরত ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ছবিও ফেসবুকে চলে আসলো, চলে আসলো সোস্যাল মিডিয়ায়!
তাহলে কি এগুলো আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল যে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের খাবারের ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে পাবলিকলী হেয় করা? সরকারের কাজ কারবার দেখলে ঘেন্না লাগে। কে একজন বলেছেন সব ফোনালাপ প্রচার করা হয়, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যংকের রিজার্ভ চুরি, শেয়ারমার্কেট কেলেংকারী, হলমার্ক, ডেষ্টনী, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ফোনালাপ পাশ হয়না! এদের ব্যাপারে কি বলবেন? খালেদা জিয়ার দুকোটি টাকার মামলার বিচার হয়, অথচ মিগ ২৯, কোরিয়ান ফ্রিগেট, নাইকো, মেঘনা বিদ্যুত কেন্দ্র, খুলনা বিদ্যুত কেন্দ্র, টঙ্গিপাড়া স্মৃতি সৌধ নির্মাণ, আজম জে চৌধুরী ঘুষ, নুর আলী ঘুষ সহ আরো অনেক মামলা তো তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হয়েছিল সে গুলোর কি হলো? সেগুলো কার আদেশে প্রত্যাহার করা হলো? কোন আদালতে সে গুলোর বিচার হলো? এ সবের জবাব কে দিবেন? আওয়ামী চামচারা কি দেবেন আমাকে? এ গুলো ফাস হয়না সোস্যাল মিডিয়ায়?
সে যাক, সংলাপের ফলাফল অবৈধ সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে
১. সভা সমাবেশ রাস্তা বাদ দিয়ে করলে বাধা দেয়া হবেনা। ২. বিদেশী পর্যবেক্ষক থাকতে পারবে কোনো অসুবিধে নেই। ৩. ইভিএম সীমিত আকারে থাকবে। ৪. অবৈধ? সংসদ বহাল থাকবে। ৫. কোন মামলাগুলো রাজনৈতিক, তার তালিকা দিলে তদন্ত করে কি করা যায় তা প্রধানমন্ত্রী দেখবেন। ৬. খালেদা জিয়ার রায় আদালত দিয়েছে করার কিছুই নেই। ৭. নিরপেক্ষ সরকার সংবিধান বিরোধী তা আলোচনারই সুযোগ নেই।
প্রিয় কামাল হোসেন স্যার, আমি প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কারণ ক্ষমাই মহত্বের লক্ষন। আপনি আমার এ কথার বেয়াদবী নিবেননা প্লিজ। আমি লেখার শুরুতেই লিখেছি ”ফালতু সংলাপ” স্যার এর চাইতে ভালো বাংলা ভাষা আমার অভিধানে নেই, ষ্টকেও নেই। কারণ আমি যা পড়েছি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর মত সব কিছুতেই ”রাবিশ” এ রকম না, কিন্তু ইদানিং আমাকেও বাংলাদেশের সব কিছুতেই ”ফালতু” রোগটি পেয়ে বসেছে। স্যার আপনার সাথে আমার সম্পর্কটা খুবই চমৎকার। সম্পর্কটা শুরু করেছিলেন আপনার অত্যন্ত স্নেহ ভাজন ঘনিষ্ঠ সহচর লন্ডনের গণফোরামের নেতা জনাব মকব্বীর খান। আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ মোকাব্বির ভাই। আপনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৯৩/১৯৯৪ ইংরেজীতে, সম্ভবত পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেইনে, তৎকালীন সময়ে একটি খবর প্রচারিত হয়েছিল আপনি জাতিসংঘের মহাসচিব হচ্ছেন। তারপর বিভিন্ন্ সময় আপনি লন্ডনে আসলে কথা হয়েছে দেখা হয়েছে। ২০১১/১২ সালে চ্যানেল আই লন্ডন ষ্টুডিওতে আপনাকে নিয়ে লাইভ প্রোগ্রাম করেছিলাম টানা তিন চার ঘন্টা। রাত নয়টা থেকে শুরু করে ১টা ২টা পর্যন্ত চলতো, সরকারের কিছু লোক পরের দিন আমাকে জিজ্ঞাস করতো কি এচিভ করলেন কামাল সাহেবের সাথে টক শো করে? আমি প্রায়ই তাদের এসব প্রশন এড়িয়ে চলতাম, এখনো ও চলি। আপনি অবশ্য লন্ডনে আসলে অন্য কোনো চ্যানেলের ষ্টুডিওতে যেতে চাননি। এ নিয়ে আমার সাথে কারো কারো সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছে, তারা ভাবেন আমি আপনাকে নিষেধ করেছি।
সে যাক, স্যার আপনার দিকে এবার গোটা জাতি তাকিয়ে আছে। অবশ্য জাতি আশা করেছিল আপনি আপনার ভাতিজির কাছ থেকে কিছুটা হলেও দাবি দাওয়া আদায় করতে পারবেন। কিন্তু সংলাপের পরে জাতীর আশা আকাংঙা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। রাত থেকে আমার মোবাইল ফোনটি বেজেই চলছে, প্রশ্ন একটি, কি ভাই আপনার কামাল হোসেন স্যার কি নিয়ে আসলেন গণভবন থেকে? স্যার জবাব আছে? নেই। আমি অবশ্য আগেই জানতাম এ সংলাপের ফলাফল হবে শুন্য+শুন্য যেটাকে বলা হয় অন্তসারশুন্য। তারপর ও আলোচনা করতে হয়। সেটি লোক দেখানো হলেও করে, আলোচনা করে এ বিশ্বকে দেখায় দেখ আমি বিরোধী দলের কথা শুনছি। স্যার আমি যদি আপনার জায়গায় থাকতাম তাহলে আমি এ সংলাপের জন্য চিঠি দিতামনা। কারণ আমি জানি এ অবৈধ সরকার কোনো কিছুই মানবেনা। স্যার অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী যিনি তিনি নাকি বলেছেন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি সংবিধান বিরোধী অতএব আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। এ কথা যদি তারা বলে থাকেন তাহলে তো সবিনয়ে বলতে হয় তারা তো অবৈধ সরকার! ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমের সরকার, সংবিধান নিয়ে কি কথা বলার কোনো অধিকার অবৈধ সরকারের রয়েছে? আপনি সংবিধান লিখেছেন আপনাকেই কি-না সংবিধানের তালিম দেয়? স্যার আপনার নেতৃত্ব বিএনপি মেনে নিয়েছে, এখন বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন তাদের আম চালা সব নাকিই যাবে? তবে আমার বিশ্বাস আপনি যদি শক্ত হাতে হাল ধরেন তাহলে এবার ব্যর্থ হবেননা। কারণ আমি যা শুনেছি মনে হচ্ছে একটা কিছু হবে। কারণ বৃটেনের কুঠনৈতিক পাড়ায় ইতিমধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে। অনেকেই বলছেন শেখ হাসিনা এসব পাত্তা দেননা। পাত্তা তো অনেকেই দেননি অতীতে। ওয়ান ইলেভেনের সময় দৌড় কাহাকে বলে আমরা দেখেছি, হায়রে দৌড়, দৌড়ের ছটে কে কোথায় কোন দিকে পালিয়েছিলেন হদিস পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকারের কি দৌড়ের সময়টা কড়া নড়ছে? কে জানে, কারণ যেভাবে তারা কথা বলেন মনে হয় সব কিছুই তাদের দখলে। একটা বিষয় কি করা যায়না স্যার অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবকে কিছুদিনের জন্য কোথাও আঠকে রাখা যায়না? আঠকে রাখা যায়না ওবায়দুল কাদের সাহেবকে? উনাদের কথা শুনলে আমার গা জ্বলে। বিশেষ করে ওবায়দুল কাদের সাহেবের। উনি যেভাবে যে ভঙ্গিতে কথা বলেন উনাকে মনে হয় একটা জৌক। সংলাপের পর কাদের সাহেব মাথা নীচু করে কথা বলেছেন সাংবাদিকদের সাথে উনার আই কন্ট্রাক্ট ছিলনা। যে সব বক্তব্য তিনি দিয়েছেন তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে কাদের সাহেব জাতীর সাথে প্রতারনা করছেন ।
এক শ্রেণীর আওয়ামী বুদ্ধিজীবি রয়েছেন তারা বলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নাকি বিশ্বনেত্রীর পর্যায়ে চলে গেছেন। তিনি সংলাপ এবং ঐক্যফন্ট্রের নেতাদের যেভাবে সামাল দিয়েছেন তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা না করে পারা যায়না। আমি সে সব চাটুকার বুদ্ধিজীবিদেরকে সবিনয়ে বলতে চাই, কমনওয়েলথ কনফারেন্সে যখন লন্ডন এসেছিলেন বিশ্বনেত্রী? তিনি চ্যানেল ফোর এর সাংবাদিক এলেক্স টমসনকে ফেইস করতে পারেননি। বিশ্ব তো অনেক দুরে। কাকে কি বলবো? বলার কিছুই নেই। ওরা এমন ভাবে তৈল মর্দন করে মনে হয় প্রাইড ওয়েলের পুরো তেলের ড্রামটি যেন শেখ হাসিনার উপর ঢেলে দেয়। স্যার ওদের কি লজ্জা শরম নেই? কি নির্লজ্জের মত চামচামী করে। বিশ্ব নেত্রীর ডেফিনেশন কি ওরা কি জানে? মাঝে মধ্যে মনে হয় ওদের মাথাটা ফাটিয়ে দিয়ে ফাঁক করে কিছু ভালো মানুষের ব্রেইন ভরে দিতে। যে ব্রেইন থেকে চামচামী বের হবেনা। সিলেটি ভাষায় একটি কথা আছে “বান্দীর পেটো যার জনম তার নাই দেব ধরম, অর্থাৎ বান্দীর পেটে যারা জন্ম নেয় তাদের কোনো ধর্ম কর্ম নেই”।
সে যাক, ঐক্যফ্রন্টের যে সব নেতারা সেদিন গনভবনে গিয়েছিলেন আমি তো খবর পেয়েছি কি আলাপ হয়েছে সেখানে। এক পর্যায়ে তো বিশ্বনেত্রী মাহমুদুর রহমান সাহেবের উপর ক্ষেপে গিয়ে সংলাপ অর্ধপথে রেখেই তিনি উঠে পড়েছিলেন। আপনি মান্না সাহেবকে বসিয়ে দিয়েছেন। বসানো কি উচিৎ হলো? আপনারা গনভবনে গিয়েছিলেন ভালো কথা, প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে বুঝে ফেলা উচিৎ ছিল যে সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। বেরিয়ে চলে আসলেই তো জাতী বুঝে ফেলতো আলোচনা সফল হয়নি। সফল হওয়ার তো কথা না, কারণ বিচার মানি তাল গাছ আমার। সব স্বাধীন! বিচার বিভাগ স্বাধীন? মিডিয়া স্বাধীন? পুলিশ বিডিআর আর্মি সচিবালয় প্রশাসন সবই তো স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাস করেন মিডিয়া কি স্বাধীন? আমি বলি অফকোর্স, মিডিয়া স্বাধীন না হলে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন কিভাবে বিশ্ব নেত্রীকে?
প্রিয় কামাল হোসেন স্যার, জাতীর এই ক্রান্তিকালে আপনাকে হাল ধরতে হবে শক্ত করেই। পাশে বসে যারা সাইড টক করেন তাদেরকে বলুন কথা বন্ধ করতে। সুলতান মনসুর সাহেবকে বলুন মুজিব কোট আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এখন বড় ইস্যু না, এখন ইস্যু হচ্ছে খুন গুম থেকে জাতিকে মুক্ত করা। রিজভী সাহেবকে বলেন বাজে কথা না বলতে। জিয়াউর রহমান সাহেব এখানে এখন ইস্যু নন। কে জিয়াউর রহমান সাহেবের নাম মুখে নিল আর কে বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে নিল এটা কি আলোচ্য বিষয়? আলোচ্য বিষয় এখন রাজনীতির গরুর রচনা। গরু দিয়ে হাল চাষ করে মানুষ ছাগল দিয়ে হাল চাষ করেনা। দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর একটি দেশে খুন গুম চলতে পারেনা। চলতে পারেনা ফাজলামি। সব কিছুরই সীমা আছে। সীমা থাকা দরকার। অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিলেন, সিনহা সাহেবকে লাত্তী দিয়ে সরিয়ে দিলেন, এখন নির্বাচন নিয়ে টাল বাহানা করছেন, এত উন্নতি এত ডিজিটাল উন্নতি, এত ফ্লাইওভার তার পর ও এত ভয় অবৈধ সরকারের। তার মানে তারা কিছুই করেনি। তারা মনে করছে ক্ষমতা ছাড়লেই দৌড়। দৌড়ের উপর কোনো ঔষধ নেই। সরকারকে বলুন ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিতে। কারণ এবারও যদি তারা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করে তাহলে অন্যায়ের মাত্রা আরো দশগুন বেড়ে যাবে, যেখান থেকে জাতী কিছুই পাবেনা। খুন গুম আর দুর্নীতি ছাড়া!!!
লেখক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
তারিখ ৩/১১/২০১৮ লন্ডন